এম. জিয়াউল হক: চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদে মাদক ব্যবসায়ীদের ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত ছাত্রদল নেতা মীর সাদেক অভি আর নেই (ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন)। মঙ্গলবার (২৩শে জুন) দিবাগত রাতে নগরীর মেট্রোপলিটন হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
বুধবার (২৪ জুন) বাদে মাগরিব আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসস্থ মীর বাড়ী মাঠে মরহুমের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
গত ১৫ই জুন আগ্রাবাদের হাজীপাড়ায় মাদক ব্যবসায়ীরা অভিকে ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত করে। ছুরিকাঘাতের ঘটনায় গত ১৮ই জুন ডবলমুরিং থানায় একটি মামলা দায়ের করেন অভি।
নিহতের স্ত্রী ফারিয়া সুলতানা অহনা জানান, গত ১৫ জুন আমার বড় বোনের শ্বাসের সমস্যা দেখা দিলে তার জরুরি অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। পরে আমার স্বামী অভি অক্সিজেন ব্যবস্থা করে রাতে বাসায় ফেরার পথে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী সন্ত্রাসী বাবু, টিটু ও তুহিন তিন ভাই মিলে তাকে রাস্তায় পেয়ে গালাগালি করতে থাকে। এক পর্যায়ে বাবু অভিকে ছুরিকাঘাত করে।খবর পেয়ে আমরা অভিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। চিকিৎসা শেষে কয়েকদিন বাসায় থাকলেও মঙ্গলবার রাতে তার অবস্থার অবনতি হলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে রাত পৌনে ২টার দিকে অভি মারা যায়।
অহনা আরো বলেন, স্থানীয় সন্ত্রাসী বাবু, টিটু ও তুহিন মাদক ব্যবসা করতো। তাদের এ মাদক ব্যবসা নিয়ে অভি প্রায় সময় প্রতিবাদ করতো। এই কারণে তাকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয় তারা।
নিহতের স্ত্রী অহনা ও তার পরিবারের সদস্যরা অভি হত্যাকারীদের শাস্তি দাবি করেন।
নিহত অভির বন্ধু রিয়াদ বলেন, স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভি কয়েকবার প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহন করে এবং মাদক ব্যবসায় স্থানীয়দেরকে বাঁধা দেওয়াই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রিয়াদ বলেন, অভির এক আত্মীয় অসুস্থ হওয়ায় সেদিন অভির বাসায় ফিরতে রাত হলে স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী বাবু, টিটু ও তুহিন তিন ভাই মিলে অভিকে মারধরের এক পর্যায়ে বাবু অভিকে ছুরি মারে। এতে করে অভির বুকের ডান পাশে ছুরিবিদ্ধ হলে তাকে প্রথমে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে অবস্থার অবনতি হলে তাকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে আসি। সেখানে চিকিৎসা শেষে কয়েকদিন বাসায় থাকা অবস্থায় গতরাতে (মঙ্গলবার) অভির অবস্থার অবনতি হলে মেট্রোপলিটন হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে রাতে মারা যায়।
এ বিষয়ে ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুদীপ কুমার দাস বলেন, ১৫ই জুন রাতে অভি বাসায় ফেরার পথে স্থানীয় বাবু, টিটু ও তুহিনের সাথে তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে বাবু অভিকে ছুরিকাঘাত করে। এ ঘটনায় গত ১৮ই জুন অভি বাদি হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
তিনি বলেন, যেহেতু ভিকটিম মারা গেছে সেহেতু লাশ পোস্টমর্টেম করা হবে এবং পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। আসামীদের ধরতে পুলিশের একটি টিম মাঠে অভিযান পরিচালনা করছে বলেও জানা ওসি সুদীপ কুমার দাস।
বিএনপির ক্ষোভ ও শোক :
এদিকে মীর অভিকে হত্যার ঘটনার ক্ষোভ, তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোঃ নাছির উদ্দীন, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বেগম রোজী কবির, গোলাম আকবর খন্দকার, এস এম ফজলুল হক, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডাঃ শাহাদাত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান।
এক শোক বার্তায় নেতৃবৃন্দ বলেন, মরহুম মীর সাদেক অভি চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রদলের একজন পরিশ্রমী ও ত্যাগী ছাত্রনেতা ছিলেন। ছাত্রদলকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে তার ভূমিকা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা কখনো ভুলবেনা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী একজন সাহসী ছাত্রনেতার মৃত্যুতে ছাত্রদলের অপুরনীয় ক্ষতি হলো। তার মৃত্যুতে পরিবারবর্গ, আত্নীয় স্বজন এবং গুনগ্রাহীরা শোকাবিভূত। তার মৃত্যুতে সবার মত আমরাও গভীর ভাবে শোকাহত ও মর্মাহত। আমরা এধরনের হত্যার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পর থেকে সারাদেশ আজ মাদক ব্যবসায়ীদের সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছে। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কার্যকর প্রদক্ষেপ গ্রহণ করছেনা বরং তাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে। ছাত্রদল নেতা মীর সাদেক অভি মাদকের আগ্রাসন থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় তাকে জীবন দিতে হয়েছে। আমরা ছাত্রদল নেতা অভি’র হত্যাকারী সন্ত্রাসী মাদক ব্যবসায়ীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। একই সাথে মরহুম মীর সাদেক অভি’র বিদেহী আত্বার মাগফেরাত কামনা করে শোক বিহব্বল পরিবারবর্গ ও আত্মীয় স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।
সম্পাদক ও প্রকাশক :
Copyright © 2025 বাংলার প্রভাতী. All rights reserved.