মঙ্গলবার, ১১ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মঙ্গলবার, ১১ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ মঙ্গলবার, ১১ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই শাবান ১৪৪৬ হিজরি

কারাবাসে বদলে গেছে খালেদার জীবনচিত্র !

প্রভাতী ডেস্ক : জেল থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে বাসায় আসার পর নতুন সময়সূচিতে চলছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। নির্দিষ্ট আত্মীয়-স্বজন ছাড়া দেখা করছেন না কারোর সঙ্গে। দলের নেতাদের সঙ্গেও না।

জেলে যাবার আগে অনেক রাতে ঘুমানোর অভ্যাস থাকলেও সেটি পরিবর্তন হয়ে যায় কারাবাসের সময়। আর জেল থেকে ছাড়া পাবার পর নিজের স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে নির্দিষ্ট সময়সূচিতে দিন কাটাচ্ছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন।

ব্যক্তিগত চিকিৎসক টিমের পরামর্শে খালেদা জিয়া এখন প্রতিদিন রাত ১১টায় ঘুমিয়ে পড়েন। ফজর নামাজের আগেই ঘুম থেকে উঠেন। তারপর নামাজ আদায় করেন। নামাজের পর পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত ও তাসবীহ পাঠ করেন।

মহামারী করোনা ভাইরাস থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করতে তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন বলে জানান খালেদা জিয়ার এক নিকট আত্মীয়। দেশের মানুষের পাশে থাকতে দলের নেতাদের প্রতি সম্প্রতি নির্দেশও দিয়েছেন। বাসায় তিনি এখন ডাক্তারদের পরামর্শে খাওয়া-দাওয়া করছেন।

বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে খালেদা জিয়ার আগের রাজনৈতিক সিডিউল এখন নেই। সব কিছুর রুটিন পাল্টে গেছে। বয়স, সময়, রাজনৈতিক পরিস্থিতি সব কিছু বিবেচনা করে তিনি নিজেই জীবনের পরিবর্তন এনেছেন।

এদিকে গত ২৫ মার্চ বিএসএমএমইউ হাসপাতাল থেকে খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় ওঠেন। ২৬ মার্চ থেকে তার হোম কোয়ারেন্টাইন শুরু হয়। আর ৮ এপ্রিল ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইন পূর্ণ হয়।

আপাতত খালেদা জিয়ার টানা হোম কোয়ারেন্টাইন চলছে। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকাবস্থায় সরাসরি দলের কোনো নেতার সঙ্গে কথা হয়নি ম্যাডামের। জানিয়েছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।

তিনি বলেন, ম্যাডামের সঙ্গে আমি দেখা করেছি যেইদিন তিনি মুক্তি পাবেন তার আগের দিন। আমার জানামতে এখন পর্যন্ত বিএনপির কোনো শীর্ষ নেতা দেখা করেননি। কেননা সবাই স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। এ মুহূর্তে কেউ কারো সঙ্গে দেখা করার সুযোগ নেই। তাই ম্যাডাম আগ থেকেই জানিয়ে দিয়েছেন তিনি হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। কোনো নেতার সঙ্গে দেখা করবেন না।

জেল থেকে বাসায় আসার পর খালেদা জিয়া কেমন আছেন জানতে চাওয়া হয় বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতার কাছে। তারা বলেন, অবশ্যই ম্যাডাম ভালো আছেন। আমরা ওনার জন্য দোয়া করছি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে। এ করোনার মধ্যেও ম্যাডাম যেন সুস্থ থাকে, এটিই আমাদের প্রত্যাশা।

সূত্র জানিয়েছে, এখনো তার মূল চিকিৎসা শুরু হয়নি। বর্তমানে সুচিকিৎসা নেয়ার পরিবেশ নেই। বাসায় বসে তিনি নিয়মিত সংবাদ মাধ্যমে খোঁজখবর নিচ্ছেন দেশবাসীর।

পাশাপাশি বিদেশেরও খবর রাখছেন। এখন পর্যন্ত রাজনীতি নিয়ে কোনো কথাবার্তা বলেননি। প্রতিদিন টেলিভিশন দেখেন, লন্ডনে ৩ নাতনির সঙ্গে কথা বলেন, মোবাইল, ফেসবুক ইনবক্সে, ভাইভার, ওয়াটসআপে। নিয়মিত বাসায় সেবক হিসেবে রয়েছেন সেই গৃহকর্মী ফাতেমাই। মাঝে মাঝে ভাই শামীম ইস্কান্দার ও বোন সেলিমা ইসলাম গুলশানের বাসায় থেকে খালেদা জিয়াকে নিয়মিত দেখাশুনা করেন।

বিএনপি সূত্র আরো জানিয়েছে, ম্যাডাম খালেদা জিয়া মিষ্টি, রসমালাই, ফিন্নি, ফ্রুটস পছন্দ করেন। এসব ফ্রুটস নিয়মিত তাকে দেয়া হয়। এছাড়া রাতে দুধ ও ডিম খাওয়ানো হয়। আর বোন সেলিমা ইসলামের বাসা থেকে পাঠানো হয় খাবার। এছাড়াও মাঝে মাঝে ভাইদের বাসায় থেকে খাবার পাঠানো হয়। অনেক সময় নিজের বাসায়ও খাবার রান্না করা হয়।

দলটির একজন শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে প্রতিদিন সকাল-বিকাল মা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ খবর নেন। দেশের রাজনীতি, করোনা, দলের নেতা ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাষ্ট্র পরিচালনার বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন।

এছাড়াও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া টেলিফোনে অনেক শীর্ষ নেতার খোঁজ নিচ্ছেন বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। আর খালেদা জিয়ার নিয়মিত স্বাস্থ্য চেকআপ করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ও ডাক্তার আল মামুন।

করোনার এ পরিস্থিতিতে ও হোম কোয়ারেন্টাইনে বিএনপির চেয়াপার্সন বেগম খালেদা জিয়া কিভাবে সময় কাটছে এমন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডা. এ জেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, তিনি কারো সঙ্গে এখনো সরাসরি সাক্ষাৎ করেননি। আর স্টে হোম কোয়ারেন্টাইনের মধ্যে কোনো দলের রাজনীতিবিদদের কেউ সাক্ষাতের সুযোগ নেই, প্রয়োজনও নেই। তিনি নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ করেন। তিনি যখন ডাক্তারদেরকে ডাকেন তখন আমরা ওনাকে দেখতে যাই।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print