প্রভাতী ডেস্ক: স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ নূর হোসেনকে ইয়াবা ও ফেন্সিডিলখোর বললেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা। পুলিশের গুলিতে নূর হোসেনের নিহত হওয়া নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এরশাদের দলের এই নেতা।
নূর হোসেন দিবসে রবিবার দুপুরে এক অনুষ্ঠানে রাঙ্গা বলেন, ‘পুলিশ গুলি করলো সামনে থেকে আর ঘুরে গিয়ে পেছন থেকে লাগল। কি হাস্যকর যুক্তি। তখনতো একজন মারা গেছে, এখন প্রতিদিনই মানুষ মরছে।’
১৯৮৭ সালের ১০ নভেম্বর তৎকালীন স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে বুকে-পিঠে ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক’, ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’— স্লোগান ধারণ করে মিছিলে অংশ নেন নূর হোসেন।
মিছিলটি গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে পৌঁছানোর পর এর অগ্রভাগে থাকা নূর হোসেন গুলিবিদ্ধ হন। তার তাজা রক্তে রঞ্জিত হয় রাজপথ, বেগবান হয় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন। ওই ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদের পতন ঘটে।
নূর হোসেন সম্পর্কে বলতে গিয়ে রাঙ্গা বলেন, ‘ইয়াবাখোর ফেনসিডিলখোর ছিলেন নূর হোসেন। তাকে নিয়ে নাচানাচি করছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তাদের কাছে ইয়াবা-ফেন্সিডিলখোর ও ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের গুরুত্ব বেশি। কিন্তু এরশাদ সাহেবের কাছে এরা কোনো গুরুত্ব পাননি। যারা গণতন্ত্রের গ-ও বুঝে না।’
আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ১০ নভেম্বর শহীদ নূর হোসেন দিবস হিসেবে পালন করে থাকলেও এই দিনটিকে জাপা পালন করে থাকে গণতন্ত্র দিবস হিসেবে।
মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, ‘গণতন্ত্র আজ নির্বাসনে সুন্দরবনে। যদি বিশ্বজিৎ ও আবরারকে হত্যা করা না হতো তাহলে বলতাম গণতন্ত্র রয়েছে। শিক্ষককে পানিতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। জাবি ভিসির পদত্যাগের জন্য আন্দোলন করছে ছাত্ররা।’
ঢাকার বনানীতে জাপা কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় দলের প্রয়াত চেয়ারম্যান এরশাদ নয় বরং খালেদা জিয়া স্বৈরাচার এমন দাবি করে বলেন ‘খালেদা স্বৈরাচার হলে শেখ হাসিনাও স্বৈরাচার। একুশ বছর পর এরশাদের অনুগ্রহে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। আর সেই আওয়ামী লীগ তার বিরুদ্ধে মামলা দেয়। নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করে। আওয়ামী লীগ বিএনপি গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। ওদের মুখে গণতন্ত্র মানায় না। এই গণতন্ত্র মুখে দেয় নাকি মাথায় দেয়।’
অনুষ্ঠানে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, ‘নূর হোসেনের মৃত্যুর বিচার আমরা চাই। সুষ্ঠু তদন্ত চাই। মিলন হত্যার বিচার চাই, সুষ্ঠু তদন্ত চাই। যাতে মানুষ সঠিক ঘটনা জানতে পারে। এই নোংরা রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।’
‘এরশাদ সাহেব ১৯৮৬ সালের এই দিনে ঘোষণা দিয়েছিলেন দেশে আর কোনো দিন সামরিক শাসন আসবে না। আর কিন্তু কখনই কাঠামোগতভাবে সামরিক শাসন আসেনি।’
যেদিন সঠিকভাবে ইতিহাস রচিত হবে, সেদিন দেশের মানুষ এই দিনটিকে গণতন্ত্র দিবস হিসেবে পালন করবে বলেও মন্তব্য করেন এরশাদের ভাই জিএম কাদের।
তিনি বলেন, ‘এরশাদের জীবন ব্যবস্থা ছিল গণতন্ত্রের জন্য উৎসর্গ। উনি গণতন্ত্রের স্বার্থে বাধ্য হয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন। আবার যখন প্রয়োজন হয়েছে গণতন্ত্রের স্বার্থে উনি ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছেন।’
ঢাকা মহানগর উত্তর জাপার সভাপতি প্রেসিডিয়াম সদস্য এসএম ফয়সল চিশতীর সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, প্রেসিডিয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান, অ্যাড. শেখ সিরাজুল ইসলাম, সুনীল শুভরায়, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, আলমগীর সিকদার লোটন, ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক এমএ রাজ্জাক খান প্রমুখ। বক্তব্য রাখেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক :
Copyright © 2025 বাংলার প্রভাতী. All rights reserved.