নিজস্ব প্রতিবেদক: ১৫ মার্চ বিশ্ব ভোক্তাধিকার দিবস। ক্রেতা-ভোক্তা সচেতনতার উদ্দেশ্যে অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশের সকল শহর এবং জেলা-উপজেলায় যথাযথভাবে পালিত হয়েছে দিবসটি। ১৫ মার্চ শুক্রবার সকাল ১০ টায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর- চট্টগ্রাম বিভাগ এবং কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) -চট্টগ্রাম বিভাগের যৌথ উদ্যোগে র্যালী এবং চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে আলোচনা সভার মাধ্যমে দিবসটি উদযাপিত হয়। বিভাগীয় কমিশনার মোঃ আবদুল মান্নান সার্কিট হাউজের সামনে বেলুন উড়িয়ে দিবসটির শুভ সুচনা করেন। পরে তাঁর নেতৃত্বে সার্কিট হাউজের সামনে থেকে একটি র্যালী শুরু হয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে পুনরায় সাকির্ট হাউজে এসে শেষ হয়।
র্যালী শেষে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ সম্মেলন কক্ষে একটি আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেনের সভাপতিত্বে এবং ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরীর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার জনাব মো:আবদুল মান্নান। প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান বলেন, এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ও নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রী নিজেই একজন ভোক্তা। এছাড়া তিনি নিজেই রান্না করেন। তাই খাদ্যে ভেজাল নিয়ে তিনি অনেক বেশী অবগত। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে তিনি ২০০৯ সালে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন করেন। নিরাপদ খাদ্য ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্স নীতির নির্দেশ দিয়েছেন। তবে দেশের ভোক্তারা সচেতন নয়। ভোক্তা অধিকার সংগঠনগুলি নানা কারনে কার্যকর ভুমিকা রাখতে সক্ষম হচ্ছে না। সে কারনে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়কে সচেতন হতে হবে। কারন যে ১টি পণ্যের বিক্রেতা সে আরো ১০টি পণ্যের ক্রেতা। সেলস ম্যানের কথায় পণ্য না কিনে নিজেকে যাচাই বাচাই করতে হবে। ভেজাল নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ীদের মানসিকতার পরিবর্তনের বিকল্প নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিশেষ অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) শংকর রঞ্জন সাহা,স্থানীয় সরকার চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক দীপক চক্রবর্ত্তী, অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) এসএম মেহেদী হাসান, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম এবং ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন।
বিশেষ অথিতি শংকর রঞ্জন সাহা বলেন, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সুখী সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি নিরাপদ এবং মানসম্পন্ন পণ্য নিশ্চিত করতে হবে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে দূর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীদের রুখে দিতে যার যার অবস্থান থেকে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। প্রশাসন ভোক্তাদের পাশেই আছে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দীপক চক্রবর্ত্তী বলেন, ভেজাল পণ্য বিক্রি করে ভোক্তাদের ক্ষতি করার কোন অধিকার নেই। স্থানীয় সরকারের অধীন প্রতিষ্ঠান সমূহকে ব্যবহার করে তৃণমূল পর্যায়ে ভোক্তা সাধারণকে সচেতন করা হবে। ভেজালকারীর লাইসেন্স বাতিলেরও সুপারিশ করা হবে। এছাড়া অপরাধীকে প্রথমবার দন্ড না দিয়ে সতর্ক করার মাধ্যমে আত্বপক্ষ সমর্থনের সুযোগ প্রদানেরও অনুরোধ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, বাংলাদেশের ভোক্তারা নিরাপদ ও মানসম্পন্ন পণ্য প্রাপ্তির বেলায় পুরোপুরি সংকটে রয়েছে। কারন বাজারে ভেজাল ও মানহীন পণ্যে সয়লাব। কিন্তু সেখানে প্রশাসনের যথাযথ নজরদারি নেই। ভোক্তারা প্রতিনিয়তই প্রতারিত হচ্ছে, ঠকছে, আইনী সুবিধা নিশ্চিত হচ্ছে না। ভোক্তা অধিকার সুনিশ্চিত করতে হলে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও আন্তরিক ও ভোক্তা বান্ধব হতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চিটাগাং চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, আসন্ন রমজান উপলক্ষ্যে ব্যবসায়ীবৃন্দকে অনৈতিক মুনাফা অর্জন হতে এখন থেকে বিরত থাকতে হবে। ভেজাল ও অতি মুনাফাকারী ব্যবসায়ীদেরকে চট্টগ্রাম চেম্বার কোনভাবে সহায়তা দিবেই না,বরং তার চেম্বারের সদস্য পদ বাতিলের ব্যবস্থা করা হবে। রমজানে দ্রব্যমূল্য ও ভেজাল রোধে প্রশাসনের কঠোর নজরদারীর আহবান জানান তিনি। চট্টগ্রাম চেম্বারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাসও প্রদান করেন তিনি।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এডিসি এস.এম মেহেদী হাসান বলেন, দেশ অনেক উন্নত হয়েছে। প্রয়োজনীয় সকল আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। তাই ভেজাল নিয়ন্ত্রণ তেমন কঠিন কোন ব্যাপার না।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক ইলিয়াছ হোসেন বলেন,সবাইকে সচেতন হতে হবে। কোথাও কোনো ভেজাল, মানহীনতা ও অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে জেলা প্রশাসন, বিভাগীয় প্রশাসন, ক্যাব ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে অবহিত করতে হবে। প্রয়োজনে সরকারের জরুরী সেবা ৩৩৩ এ ফোন করে অনিয়মের তথ্য জানানোর জন্য সকলের প্রতি আহবান জানান। তৎক্ষনাৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দূর্নীতিবাজ এবং ভেজাল পণ্য উৎপাদনকারী ব্যাবসায়ীদের আইনের আওতায় আনতে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থানার মাধ্যমে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ ব্যাখা করে ক্রেতা-ভোক্তার করণীয় নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগের সহকারী পরিচালক মো: হাসানুজ্জামান। কোন ভোক্তা প্রতারিত হয়ে অভিযোগ প্রদান করলে প্রতারক ব্যাবসায়ীকে আর্থিক জরিমানার ২৫% অভিযোগকারীকে প্রদানের বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
আলোচনায় অন্যান্যদের মধ্যে আরো অংশ নেন
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর
সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ, উইমেন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আবিদা মোস্তফা, চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ সদস্য আনোয়ারা বেগম, বাংলাদেশ রেস্তোঁরা মালিক সমিতির সভাপতি ইলিয়াছ ভুইয়া, জেল পরিদর্শক ইয়ামুন্নাহার,দোকান মালিক সমিতির যুগ্ন সম্পাদক খালেদ খান চৌধুরী,ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারন সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু,ক্যাব দক্ষিন জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান প্রমুখ।
আলোচনা সভায় সরকারী বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা, ক্যাব সদস্যবৃন্দ, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, শিক্ষক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও যুব সংগঠনের প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার ব্যক্তিবর্গ এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
ভোক্তা অধিকার বিষয়ে জেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠিত রচনা প্রতিযোগিতায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারী মধ্যে প্রধান অতিথি মহোদয় নগদ অর্থ,ক্রেস্ট ও সনদ পত্র প্রদান করেন।