ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িক কারাগার ঘোষণা করা হয়েছে। রোববার(১২ অক্টোবর ) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে বলা হয়, ঢাকা সেনানিবাসের বাশার রোডসংলগ্ন উত্তরদিকে অবস্থিত ‘এমইএস বিল্ডিং নম্বর-৫৪’কে সাময়িকভাবে কারাগার হিসাবে ঘোষণা করা হলো। ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ধারা ৫৪১(১)-এর ক্ষমতাবলে এবং কারা আইন ১৮৯৪-এর ধারা ৩(বি) অনুসারে ভবনটিকে সাময়িক কারাগার হিসাবে ঘোষণা দেওয়া হয়। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে এই আদেশ জারি করা হয়েছে। আদেশটি অবিলম্বে কার্যকর হবে। তবে এই কারাগারে কাদের রাখা হবে, কোন উদ্দেশ্যে ভবনটি সাময়িক কারাগার হিসাবে ব্যবহৃত হবে, সে বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে কিছু বলা হয়নি।
এর আগে গুম ও মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ১১ অক্টোবর শনিবার সাংবাদিকদের এ সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া হয়। সেনা কর্মকর্তারা এখনো সেনা হেফাজতেই আছেন।
সোমবার এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, আসামিকে গ্রেফতার করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে আনতে হবে। তারপর আদালত যেখানে আসামিকে রাখতে বলবেন, আসামি সেখানে থাকবেন। আসামিদের গ্রেফতার করবে পুলিশ। কোন জায়গাকে কারাগার ঘোষণা করা হচ্ছে, সেটা তাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে কারাগার ঘোষণা করে রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে, সে প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি এসব কথা বলেন। এদিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, গ্রেফতারের এখতিয়ার একমাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা পুলিশের। সেনাবাহিনীর গ্রেফতারের এখতিয়ার নেই। এখানে কোনো বিভ্রান্তির সুযোগ নেই। গ্রেফতারি পরোয়ানার আদেশটি পালনের ব্যাপারে সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের অফিসকে অবহিত করা হয়েছিল। তারা কিন্তু গ্রেফতার করবেন না, অবহিত হবেন। অবহিত হওয়ার অর্থ হচ্ছে, পুলিশ যখন গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল করতে যাবে, তখন তারা যেন পুলিশকে সাহায্য করেন। সুতরাং গ্রেফতারের ক্ষমতা একমাত্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর, অন্য কারও নয়। তিনি বলেন, পুলিশ যদি গ্রেফতার করে তখন আইন প্রযোজ্য হবে, তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে আনতে হবে। যদি গ্রেফতার না দেখানো হয়, তবে সে ক্ষেত্রে ২৪ ঘণ্টার আইন প্রযোজ্য হবে না।
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলের গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় একটিসহ তিন মামলায় ২৫ জন সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ৮ অক্টোবর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। সেদিনই ট্রাইব্যুনালে তিন মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউশন। এরপর ১১ অক্টোবর শনিবার সেনানিবাসের অফিসার্স মেস-এ’তে প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়। সেখানে বলা হয়, গুম ও মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলায় অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান এ তথ্য দেন। হেফাজতে নেওয়াদের মধ্যে ১৪ জন বর্তমান সেনা কর্মকর্তা। একজন কর্মকর্তা অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে (এলপিআর) আছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যে ১৫ কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে, তাদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনী নিজেদের হেফাজতে রাখতে চায়। মামলার নির্দিষ্ট তারিখে সেনাবাহিনী তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করবে, আদালতের কার্যক্রম শেষে আবার হেফাজতে নিয়ে যাবে-এমন একটি বিষয় আলোচনার মধ্যেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িক কারাগার ঘোষণা করে।
সূত্র জানায়, সরকার কোনো বাড়িকে সাব-জেল বা উপকারাগার ঘোষণা করলে সেখানে মামলার আসামি বা আসামিদের রাখা যাবে। এতে কোনো সমস্যা নেই। এমন নজির এর আগেও রয়েছে। ২০০৭-০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের পর সংসদ ভবন এলাকায় দুটি বাড়িকে সাব-জেল ঘোষণা করে সেখানে তাদের রাখা হয়েছিল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আরো বলেন, সেনাবাহিনীর হেফাজতে থাকা সেনা সদস্যদের গ্রেফতার দেখানো হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের আদালতে হাজির করতে হবে। ট্রাইব্যুনাল ঠিক করবেন আসামিদের সাব-জেল না অন্য কোনো কারাগারে পাঠাবেন। তিনি বলেন, যে কোনো স্থানকে কারাগার বানানোর এখতিয়ার সরকারের আছে। তবে ট্রাইব্যুনালের আইন অনুযায়ী আসামিকে গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হবে। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে-যখন কোনো আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হবে, তখনই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই পরোয়না তামিল করবেন। আসামিকে সরাসরি কারাগারে নেওয়ার কোনো বিধান নেই। আইন হচ্ছে-আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে আনতে হবে। আদালতে আনার পর আদালত যদি আদেশ দিয়ে বলেন তাকে কারাগারে পাঠানো হোক, তখন কারাগারে পাঠানো হবে। সেটা কেন্দ্রীয় কারাগার হতে পারে, জাতীয় সংসদ ভবনের মধ্যেও হতে পারে, এমপি হোস্টেল হতে পারে, অথবা অন্য কোনো জায়গায় যদি সরকার কারাগার ঘোষণা করে, সেই জায়গায়ও পাঠানো যেতে পারে। সেটা জেল বা কারাগার হিসাবে গণ্য হবে। সুতরাং কোন জায়গাকে কারাগার করা হচ্ছে, সেটা প্রসিকিউশন বা তদন্ত সংস্থার বিবেচ্য বিষয় নয়। আমাদের বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে আইন অনুযায়ী কাজটা করা।
তিনি বলেন, যে কোনো আসামিকে গ্রেফতারের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে আনতে হবে, এটা সব আইনেই আছে। চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আইনের দৃষ্টিতে পুলিশ, আর্মি ও সিভিলিয়ান বলতে কিছু নেই। আইন হচ্ছে তিনি একজন ব্যক্তি, নাগরিক বা একজন মানুষ। আইন সব সময় ব্যক্তিকে বিবেচনা করবে, সেই ব্যক্তির গায়ে কত দামি পোশাক আছে অথবা সে অস্ত্রহীন কি না, এটা আইন দেখবে না। প্রত্যেক মানুষ আইনের দৃষ্টিতে সমান।
সম্পাদক ও প্রকাশক :
Copyright © 2025 বাংলার প্রভাতী. All rights reserved.