
এম. জিয়াউল হক: চট্টগ্রামে পর্ণোগ্রাফি আইনে করা মামলায় আবু সুফিয়ান জুয়েল (২৮) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত জুয়েল চন্দনাইশ উপজেলার দক্ষিণ হারলা ৫ নং ওয়ার্ডের আবুল কালাম কালাম (সও:) বাড়ীর আবুল কালামের ছেলে। তিনি ৫ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের স্বঘোষিত নেতা বলেও জানা যায়।
সোমবার (২৩ জানুয়ারি) নগরীর ইস্পাহানি মোড়স্থ আমিন শপিং সেন্টারের সামনে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সিএমপির কাউন্টার টেররিজম বিভাগের সাব ইন্সপেক্টর হায়াত মো: খালেদ কায়সারের নেতৃত্বে একটি টিম তাকে গ্রেফতার করে।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী গৃহবধূ মুক্তিযুদ্ধা কন্যা ও ১ কন্যা সন্তানের জননী।
আত্মীয়তার সূত্রে আবু সুফিয়ান জুয়েল মাঝে মাঝে ভুক্তভোগীর মামী আয়েশা খাতুনসহ তাদের বাসায় বেড়াতে আসতো। প্রায় ৬ মাস ধরে তাকে বিভিন্নভাবে উত্যক্ত করে আসতেছে। সে তার সাথে অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত হতে চাইতো । কিন্তু এসবে রাজি না হওয়ায় সে তার ৫ বছর বয়সী কন্যাকে অপহরণ এবং তার স্বামীকে হত্যার হুমকিও দেয়। পরবর্তীতে সে জানায় তাকে ৫০,০০০/- টাকা দিলে ভুক্তভোগীকে আর বিরক্ত করবে না। নিজের ইজ্জত রক্ষা ও বড় কোন ক্ষতি থেকে বাঁচতে জুয়েলকে কয়েক দফায় প্রায় ২৫,০০০/-(পঁচিশ হাজার) টাকা প্রদান করেন ভুক্তভোগী। এই ব্যাপারে ভুক্তভোগী গত ৮/১২/২০২২ ইং তারিখে বাকলিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন, যার নং ৩৫৫।
কিন্তু জুয়েল পুনরায় ভুক্তভোগীর সাথে ইডিট করা কয়েকটি ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে তার দূর্নাম রটিয়ে তার সাথে অবৈধ শারিরীক সম্পর্ক করার চেষ্টা করে। সর্বশেষ গত ০৩/০১/২০২৩ ইংরেজি তারিখ রাত ৯.৩০ টার সময় জুয়েল তার ফেসবুক আইডির স্টোরিতে ভুক্তভোগীর সাথে ইডিট করা একটি ছবি পোস্ট করলে তিনি সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট অভিযোগ করেন।
এই ব্যাপারে সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) আসিফ মহিউদ্দীন জানান,জুয়েল ভুক্তভোগী নারীর আত্মীয়। স্বামীর অনুপস্থিতিতে বাসায় বেড়াতে গিয়ে জুয়েল গোপনে ওই নারীর গোসলের ভিডিও ধারণ করেন। পরবর্তীতে সেটি দেখিয়ে নারীকে শারীরিক সম্পর্ক ও নগ্ন হয়ে ভিডিওকলে তার সাথে কথা বলার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। বাধ্য হয়ে ওই নারী তার সাথে ভিডিও কলে কথা বললে সেগুলো স্ক্রিনশট নিয়ে রেখে দেয় জুয়েল। পরে আবার সেগুলো দেখিয়ে কয়েক দফায় ২৫ হাজার টাকা আদায় করে।
তিনি বলেন, ‘প্রতিনিয়ত নানাভাবে ব্ল্যাকমেইলিং শুরু করে জুয়েল। অতিষ্ঠ হয়ে ওই গৃহবধূ বাকলিয়া থানায় জিডি (সাধারণ ডায়েরি) করেন। এরপর আমাদের কাছে এসে অভিযোগ দেন। আমরা প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে জুয়েলকে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গ্রেফতার করি। এরপর বাকলিয়া থানায় পর্ণগ্রাফি আইনে গৃহবধূর করা মামলায় জুয়েলকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।’
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২৩/০১/২০২৩ ইং তারিখে বাকলিয়া থানার পর্ণোগ্রাফী আইনে দায়ের করা ২৭ নং মামলায় আসামী আবু সুফিয়ান জুয়েলকে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার জাহানের আদালত কারাগারে প্রেরণের আদেশ দেন। এসময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কাউন্টার টেরোরিজমের সাব ইন্সপেক্টর হায়াত মো: খালেদ কায়সার আসামীকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত ২৬ জানুয়ারি রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য্য করেন।