নিজস্ব প্রতিবেদক : ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সামনে মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) সৃষ্ট ঘটনায় পুলিশের মামলার পর এক আসামিকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলার এজাহারে আন্দোলনরত রোগীর স্বজনরা পুলিশের ওপর হামলা চলিয়েছে বলে উল্লেখ করা হলেও বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সামনে সড়কে বসে আন্দোলন করছিলেন রোগী ও স্বজনরা।
এ ঘটনার পুরো উল্টো চিত্র রূপায়ন করা হয়েছে পুলিশের এজাহারে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘পুলিশের উপস্থিতি দেখে মানববন্ধনে উপস্থিত লোকজন চমেক মূল গেইটের সামনে রাস্তায় অবস্থান নিয়ে যান চলাচলে বন্ধ করে দেন। বিষয়টি ওসিকে জানালে তিনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে রাস্তা অবরোধের কারণ সম্পর্কে জানতে চান। এসময় মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশ সদস্যদের উপর চড়াও হতে থাকে। অফিসার ইনচার্জ তাদেরকে শান্ত হওয়ার জন্য বলেন ও রাস্তা ছেড়ে চমেক হাসপাতালে ভিতরে যেতে অনুরোধ জানান। বে-আইনীভাবে জনতাবদ্ধ হয়ে পুলিশে উপর চড়াও হয়ে ঘটনাস্থলে ডিউটিরত পুলিশ সদস্যদেরকে এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি মেরে আহত করাসহ পুলিশের পরিহিত ইউনিফর্ম টানা হেঁচড়া করে। ’
অভিযোগ রয়েছে, পাঁচলাইশ থানার ওসি মো. নাজিম উদ্দীন মজুমদারের নেতৃত্বে পুলিশ সড়ক থেকে টেনে-হিঁচড়ে রোগী ও স্বজনদের তুলে দেন। এসময় কয়েকজনকে পুলিশ কিল-ঘুষি দেওয়ারও অভিযোগ করেন রোগীরা। তবে মারধর করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওসি মো. নাজিম উদ্দীন মজুমদার।
এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উত্তর বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোখলেসুর রহমান বলেন, ঘটনাস্থলে কি ঘটছে সেটি আপনার ভালো জানেন। পুলিশ আন্দোলনকারীদের সরে যেতে অনুরোধ করে। কিন্তু তারা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। পুলিশের কাজে বাঁধা দেওয়ায় একজনকে আটক করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে।
আন্দোলনরত রোগী ও স্বজনদের ওপর পুলিশের হামলা এবং এজাহারে উল্টো আন্দোলনকারীদের অভিযুক্ত করে মামলা দায়েরের বিষয়টি সাংঘর্ষিক কি-না এমন প্রশ্নে, বিষয়টি বিচারাধীন থাকায় কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
এদিকে, এ ঘটনায় গ্রেফতার মোস্তাকিম নামে ওই যুবককে বুধবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে আদালতে হাজির করা হয়। এসময় অভিযুক্ত ওই যুবকের বিরুদ্ধে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ।
মামলার বিবাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান বলেন, কিডনি ডায়ালাইসিস সেবা একটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল চিকিৎসা। হঠাৎ করে ফি বৃদ্ধি রোগীদের জন্য একটি অমানবিক ঘটনা। এমন অবস্থায় রোগী বা তাঁর স্বজনরা আন্দোলন করা স্বাভাবিক। কিন্তু কিছু অতি উৎসাহী পুলিশ তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এখন পুলিশ উল্টো তাদের বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের করেছে। এ মামলায় যাকে আসামি করা করেছে তাঁর মা গত সাত বছর ধরে ডায়ালাইসিস করছেন।
তিনি বলেন, মামলায় পুলিশের কাজে বাঁধা দেওয়া এবং পুলিশের ওপর চড়াও হওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ও ফুটেজে এমন কিছু দেখা যায়নি। পুলিশই উল্টো তাদের ওপর চড়াও হয়েছে। পুলিশের এমন ঘটনাকে ন্যাক্কারজনক বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আকতার কবির চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, দেশের এত কিছুতে নয়ছয় হচ্ছে, সেখানে ডায়ালাইসিস রোগীদের জন্য ভর্তুকি না রাখাটা অত্যন্ত দুঃখজনক। তাদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে যখন আন্দোলন করছে, তখন সেখানে পুলিশ চড়াও হয়েছে। উল্টো তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। পুলিশের এমন প্রশ্নবিদ্ধ ভূমিকার নিন্দা জানাচ্ছি। এমনকি আন্দোলনে গ্রেফতারকৃত ওই ছাত্রের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করছি।
সম্পাদক ও প্রকাশক :
Copyright © 2025 বাংলার প্রভাতী. All rights reserved.