প্রভাতী ডেস্ক: নগর পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আকতার হোসেনের সরকারি পিস্তল ও গুলি খোয়া যায় ২০১১ সালে। সেই সময় খুলশী থানায় কর্মরত ছিলেন তিনি। ঘটনার ১১ বছর পার হলেও সেই অস্ত্র কিংবা গুলি এখনও উদ্ধার হয়নি। মামলা হয়নি থানায়ও। সম্প্রতি তাকে চাকরিচ্যুত করার সুপারিশ জানিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছেন নগর পুলিশ কমিশনার।
২০২০ এর সেপ্টেম্বর মাসে নগর পুলিশ কমিশনার হিসাবে যোগ দেন সালেহ মোহাম্মদ তানভীর। তিনি কমিশনার হিসাবে ২২ মাস দায়িত্ব পালনের সময় পুলিশ সদস্যদের ডোপ টেস্ট করান। এ সময় মাদক সেবনের দায়ে ৫০ জন পুলিশ সদস্যকে শাস্তির আওতায় আনা হয়। এরমধ্যে ১০ জনকে চাকরিচ্যুত এবং বাকি ৪০ জনের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
চলতি বছরের অক্টোবরে সংঘর্ষে জড়ানোর অভিযোগে কুতুবদিয়ার হাফিজ আল আসাদকে (২৬) গ্রেপ্তার করে পতেঙ্গা থানা পুলিশ। ছুরিকাঘাতে আহত হওয়ায় চিকিৎসা নিতে পুলিশ হেফাজতে তাকে চমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে পরবর্তীতে ওই আসামির আর হদিস মেলেনি। এই ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার দায়ে সংশ্লিদের বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে ব্যবস্থা।
শুধু এই তিন ঘটনা নয়- এখন গ্রেপ্তারের পর আসামি পালিয়ে গেলে, পুলিশ সদস্যদের নামে ইস্যুকৃত অস্ত্র কিংবা গুলি খোয়া যাওয়ার পর উদ্ধার না হলে, ডোপ টেস্ট পজিটিভ হলে এবং কোনো পুলিশ সদস্য নারী কেলেঙ্কারিতে জড়ালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে পুলিশ সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে। এই চার ধরনের অপরাধে জড়িত থাকলে সরাসরি চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে।
নগর পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন- সাধারণত কোনো পুলিশ সদস্য অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংশোধনের সুযোগ দিয়ে ক্ষমা করা হয়। তবে বর্তমান আইজিপি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে চার ধরনের অপরাধ করলে কোনো ক্ষমা পাচ্ছেন না পুলিশ সদস্যরা। এসব অপরাধে জড়ানোর প্রমাণ পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে।
সম্প্রতি নগর পুলিশের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এসে আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এ বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের সতর্ক করেন। তিনি বলেন, গ্রেপ্তারের পর আসামি পালিয়ে গেলে, পুলিশ সদস্যদের নামে ইস্যুকৃত অস্ত্র কিংবা গুলি খোয়া যাওয়ার পর উদ্ধার না হলে, ডোপ টেস্ট পজিটিভ হলে এবং কেউ নারী কেলেঙ্কারিতে জড়ালে সরাসরি চাকুরিচ্যুত করা হবে।
মঙ্গলবার(২০ ডিসেম্বর) নগর পুলিশের সদর দপ্তর নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইন্সে অনুষ্ঠিত বিশেষ কল্যাণ সভায় আইজিপি পুলিশ সদস্যদের এই সতর্ক বার্তা দেন বলে সভায় উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তারা জানান, আইজিপি মঙ্গলবার সকাল নয়টায় সিএমপির বিশেষ কল্যাণ সভায় যোগ দেন। পুলিশ লাইন্স মাঠের ড্রিল শেডে এ সভার আয়োজন করা হয়।
একজন কর্মকর্তা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, সভায় আইজিপি মহোদয় পুলিশ সদস্যদের নানা সুবিধা-অসুবিধার কথা শোনেন। তিনি পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালনে আন্তরিক হওয়ার পাশাপাশি জনবান্ধব হওয়ার নির্দেশনা দেন। সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় পুলিশি সেবা পৌঁছানোর আহ্বান জানান। কোনো পুলিশ সদস্য অপরাধে জড়ালে কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে বলে সতর্ক করেন।
পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে সভায় আইজিপি বলেন, আমি কোনো পুলিশ সদস্যের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিই না। একথা আমি বললে গ্রহণযোগ্য হবে না। মাঠ পর্যায়ে যেসব পুলিশ সদস্য কাজ করেন তারা যদি একথা বলেন- তাহলে বিশ্বাসযোগ্য হবে। একইভাবে সাধারণ মানুষ যদি বলেন তারা পুলিশের কাছে হয়রানির শিকার হচ্ছেন না তবেই কথাটি বিশ্বাসযোগ্য হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক :
Copyright © 2025 বাংলার প্রভাতী. All rights reserved.