প্রভাতী ডেস্ক: চার দিন পর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় খুলে দিয়েছে পুলিশ। রোববার সকালে খুলে দেওয়ার পর দুপুর ১টা ২০ মিনিটে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের নেতৃত্বে কার্যালয়ে প্রবেশ করে একটি দল। এরপর সংবাদকর্মীদের নিয়ে ছয়তলা ভবনের কক্ষগুলো ঘুরে দেখেন তারা।
দলীয় কার্যালয়ের কক্ষের অবস্থা দেখার পর বিএনপির নেতারা বলেন, আমরা হতবাক। সব লন্ডভন্ড করে ফেলা হয়েছে। দলীয় কার্যালয়ে পুলিশি অভিযানে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের পর মামলা করা হবে। পুরো কার্যালয় পরিষ্কার করতে পরিচ্ছন্নকর্মীদের আনা হয়। এ সময় কয়েক পাতিল পচা খিচুড়ি বের করা হয়। পুরো কার্যালয় ঘুরে দেখার পর এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, পুরো ভবনের প্রত্যেকটা কক্ষ আপনাদের (সাংবাদিকদের) দেখিয়েছি। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশের তাণ্ডব দেখে আমরা হতভম্ব ও হতবাক। স্বাধীন সভ্য দেশে একটা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের কক্ষসহ প্রতিটি কক্ষের সবকিছু লন্ডভন্ড করে দেওয়া হয়েছে। এই অফিসে ঢুকে আমরা আজকে এটা মনে হয়েছে যে, সারা দেশকে সরকার যে রকমভাবে লন্ডভন্ড করে দিয়েছে সে রকমই বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসও লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এর সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের দোষী সাব্যস্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানাচ্ছি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা এই তাণ্ডবের জন্য সরকারকে দায়ী করছি। তারা (সরকার) ব্যর্থ-অযোগ্য, গণআন্দোলনের ভয়ে ভীত হয়ে আমাদের আন্দোলন ও ১০ ডিসেম্বর ঢাকার বিভাগীয় গণসমাবেশকে নস্যাৎ করার জন্য তাণ্ডব চালিয়েছে। এরপরও জনগণ ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ সফল করে সরকারের গালে চপেটাঘাত করেছে।
প্রিন্স অভিযোগ করে বলেন, গত ৭ ডিসেম্বর থেকে এই সরকার ও তার অনুগত প্রশাসন ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশকে পণ্ড করার জন্য আমাদের নয়াপল্টনের কার্যালয়ে সামনের সড়কে এবং কার্যালয়ে তাণ্ডব চালিয়েছে। সেদিন থেকেই তারা নিজেরা বোমা রেখে এসে বোমা উদ্ধারের নামে নাটক সাজিয়ে এই অফিসকে সিল করে দিয়েছিল। আজকে আমরা এসেছি। একটি দফতরে গিয়েও কম্পিউটার-সিপিইউ, স্ক্যানার আমরা পাইনি। এমনকি আমাদের দলের কেন্দ্রীয় হিসাব বিভাগের কম্পিউটার, সিপিইউ নেই। সেখানে টেবিলের ড্রয়ারগুলো ভাঙা। সেখানে আমাদের দলের সদস্যদের চাঁদা রক্ষিত ছিল এবং ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশ উপলক্ষে আমাদের খরচের টাকা রক্ষিত ছিল। অঙ্গসংগঠনের দফতরগুলোতে যে হিসাব বিভাগ আছে সেগুলো তছনছ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের ব্রিফিং রুমে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে স্কাইপি মিটিং করার যেসব সরঞ্জাম, এলইডি মেশিন, সিপিইউর যন্ত্রপাতি কিছুই আমরা পাইনি। আলমারিগুলোর তালা ভাঙা। আমাদের ছয়তলায় জিয়া স্মৃতি পাঠাগারও তারা তছনছ করেছে, সেখানে কম্পিউটার, সিপিইউসহ চাঁদার রসিদ ও চাঁদার টাকা কোনো কিছুই পাচ্ছি না। একই সঙ্গে এই ভবনের ওপরে আমাদের স্টাফদের যে আবাসস্থল সেই আবাসস্থলও আমরা পরিদর্শন করেছি। সেগুলোও তারা ভাঙচুর করেছে। আমরা আমাদের অঙ্গসংগঠনের প্রতিটা দফতরকে পরামর্শ দিয়েছি তারা তাদের দফতরে কোন কোন জিনিস খোয়া গেছে, কি কি জিনিস নিয়ে গেছে সেটা একটা তালিকা করার জন্য। আমরা কেন্দ্রীয় দফতরের তালিকা করব। সেটা করে আমরা পরবর্তী সময়ে জানতে পারব আসলে আমাদের কি কি জিনিস নেই।
কী পরিমাণ অর্থ খোয়া গেছে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমরা তালিকা করব। এরপর আপনাদের জানাব। আনুমানিক তো কিছু বলা যায় না। আপনারা নিজেরা স্বচক্ষে দেখলেন। প্রিন্স বলেন, এই ভবনের নিচতলায় প্রবেশপথে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মুর্যাল কাচে ঘেরা। সেটার ওপরও তারা তাণ্ডব চালিয়ে গ্লাস ভেঙে ফেলেছে। এর নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই।
মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম বলেছেন, রাজধানীর নয়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে যে নাশকতার ইঙ্গিত ছিল সেই সূত্রে নয়াপল্টন এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়। তা এখন আর নেই। বিএনপির সিনিয়র নেতারা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসে তাদের কার্যক্রম চালাতে পারেন। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন থেকে কোনো বাধা নেই। নয়াপল্টন এলাকা থেকে পুলিশ ব্যারিকেড সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
গত বুধবার নয়াপল্টনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কার্যালয়ের ভেতরে অভিযান চালিয়ে সাড়ে চারশ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। এরপর পুলিশ কার্যালয়সহ পুরো এলাকা ‘ক্রাইম সিন’ হিসেবে চিহ্নিত করে সেখানে নেতাকর্মীদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করে। সেই সঙ্গে নয়াপল্টনের সড়কের দুদিকে কাঁটাতারের ব্যারিকেড বসিয়ে অবরোধ করে রাখে। রোববার সকাল ৭টায় সেই অবরোধ তুলে নেয় পুলিশ।
সম্পাদক ও প্রকাশক :
Copyright © 2025 বাংলার প্রভাতী. All rights reserved.