প্রভাতী ডেস্ক : শনিবার (৫ নভেম্বর) বুয়েটে একটি পরীক্ষায় অংশ নেয়ারও কথা ছিল পরশের। তবে সে স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। শুক্রবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে নিখোঁজ হন পরশ। নিখোঁজের তিনদিন পর সোমবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর বনানী ঘাট থেকে ভাসমান অবস্থায় পরশের মরদেহ উদ্ধার করেছে নৌ থানা পুলিশ।
পরিবার ও স্বজনরা বলছেন, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এদিকে বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
স্বজনরা জানান, গত শুক্রবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ডেমরা থানার শান্তিবাগ কোনাপাড়া এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে ঢাকায় গিয়ে এক বান্ধবীর সঙ্গে দেখা করে কিছু সময় কাটান পরশ। রাত ১১টা পর্যন্ত তিনি ওই বান্ধবীর সঙ্গেই ছিলেন। পরে সায়েন্স ল্যাব থেকে ধানমন্ডির এক রেস্টুরেন্টে রাতের খাবার খেয়ে টিএসসিতে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করেন তারা। পরে রামপুরা বিটিভি অফিসের সামনে ওই বান্ধবীকে এগিয়ে দিয়ে তার কাছ থেকে বিদায় নেন পরশ। এরপর থেকে পরশের আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। ঢাকার কিছু এলাকায় সিসি টিভির ফুটেজেও পরশের অবস্থান বোঝা যায়। রাতে পরশ বাসায় ফিরে না আসায় তার বাবা কাজী নূর উদ্দিন রানা রামপুরা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন।
ঘটনার তিনদিন পর সোমবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীতে এক যুবকের অর্ধগলিত লাশ ভাসতে দেখে যায়। সদর নৌ থানা পুলিশ সেটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। পরে তার সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোনের নম্বরের সূত্র ধরে পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায়। সন্ধ্যায় স্বজন ও বন্ধুবান্ধব এসে পরশের মরদেহ শনাক্ত করেন।
তাদের দাবি, নিজ এলাকায় বা বুয়েটে পরশের কোনো শত্রু নেই। পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে। স্বজনরা হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
পরশের স্কুল জীবনের বন্ধুরা বলেন, পরশ খুব হাস্যোজ্জ্বল, বিনয়ী ও ভদ্র ছেলে। বুয়েটে কোনো রাজনীতির সঙ্গেও সে জড়িত ছিল না। তবে কেনো এই হত্যাকাণ্ড - আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
প্রভাতী ডেস্ক : নিহত পরশের বাবা কাজী নূর উদ্দিন রানা সময় সংবাদকে বলেন, আমার ছেলের কোথাও কোনো শত্রু ছিল না। সে খুব মেধাবী ছিল। আগামী মাসে তার কানাডায় যাওয়ার কথা ছিল। আমি মনে করি আমার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। কারা করেছে, প্রশাসন সেটি তদন্ত করে বের করুক। এটাই আমার দাবি।আমি আমার সন্তানকে ফিরে পাব না। বিচার হোক, এটি আমরা চাই। মেধাবীদের ধরে ধরে হত্যা করা হচ্ছে, এটি বন্ধ হোক।
নারায়ণগঞ্জ সদর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান সময় সংবাদকে বলেন, বিকেল সাড়ে ৪টায় নদীতে ভাসমান মরদেহর খবর পেয়ে আমরা গিয়ে উদ্ধার করে সুরতহাল করি। তার সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোনের নাম্বারের কল লিস্ট থেকে পরিবারের সন্ধান পাই এবং তাদের অবগত করি। পরে নিহতের বাবাসহ পরিবারের লোকজন এসে মরদেহ শনাক্ত করলে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়।
তিনি আরও বলেন, তিনদিন পানিতে থাকায় মরদেহের শরীরের বিভিন্ন অংশে পচন ধরেছে। তবে শরীরের কোথাও কোনো আঘাতের চিহ্ন আমরা পাইনি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে। পরবর্তীতে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নিহত ফারদিন নূর পরশ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং ক্লাবেরও যুগ্ম-সম্পাদক ছিলেন তিনি। তিন ভাইয়ের মধ্যে পরশ সবার বড়। তাদের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার কুতুবপুর ইউনিয়নের নয়ামাটি এলাকায়। তবে গত দুবছর যাবত তারা সপরিবারে রাজধানীর ডেমরা থানার শান্তিবাগ কোনাপাড়া এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস করছেন। পরশের বাবা কাজী নূর উদ্দিন বিজনেস পত্রিকা ‘দ্য রিভারাইন’-এর সম্পাদক ও প্রকাশক। ফারদিনের মা ফারহানা ইয়াসমিন গৃহিণী। তাদের গ্রামের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা উপজেলায়।
সম্পাদক ও প্রকাশক :
Copyright © 2025 বাংলার প্রভাতী. All rights reserved.