নিজস্ব প্রতিবেদক: মাত্র এক রাত থানায় কাটিয়ে পরদিন আপোষ মীমাংসার মাধ্যমে জামিন পেলেন গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া নারী চিকিৎসক নাহিদা আক্তার রেনু।
ওই চিকিৎসকের কাজল চোখ দেওয়ায় নির্মম নির্যাতনের শিকার হয় কিশোরী গৃহকর্মীটি। পরে তাকে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ পেয়ে বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় ভুক্তভোগীকে উদ্ধারের পাশাপাশি চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার(২২ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বাসা থেকে ওই চিকিৎসককে গ্রেপ্তারের কথা নিশ্চিত করেন চান্দগাঁও থানার ওসি (তদন্ত) রাজেশ বড়ুয়া। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার চিকিৎসক নাহিদা আক্তার রেনু (৩৪) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে কর্মরত ও এমবিবিএস ৪৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি চান্দগাঁওয়ের মোহরার বালুরটাল এলাকার ইউনুস কোম্পানির পুত্র রফিকুল হাসানের স্ত্রী। ডা. নাহিদার শ্বশুরবাড়ি মোহরায় হলেও তিনি থাকেন চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার বি-ব্লকের ১০ নম্বর রোডের ৩৯৪ নম্বর বাসায়। আর নির্যাতনের শিকার তসলিমা আক্তারের (১৫) বাড়ি চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায়। তার বাবার নাম আব্দুল গণি।
তবে শুক্রবার(২৩ জুলাই) চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার জাহানের আদালত সংক্ষিপ্ত শুনানি শেষে চট্টগ্রামের চান্দগাঁও থানায় দায়ের হওয়া মামলায় অভিযুক্ত সেই চিকিৎসক নাহিদা আক্তার রেনুকে জামিন দিয়েছেন।
জামিনের বিষয়টি নিশ্চিত করে ডা. নাহিদা আক্তার রেনুর আইনজীবী ইব্রাহিম হোসেন বাবুল এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মামলাটি ৩২৬ ধারায় করা হলেও গৃহকর্মীর গায়ে গুরুতর কোনো জখমের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। এছাড়া যেহেতু ওই গৃহকর্মীর পরিবারের সঙ্গে ডা. নাহিদার আপোষ হয়ে গেছে, তাই এটি জামিনযোগ্য।’
ওই চিকিৎসক আদালতে জামিন পেয়েছেন বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে। অভিযোগকারী কর্তৃক অভিযোগ প্রত্যাহারের কথাও শোনা যায়। তবে ওসি (তদন্ত) রাজেশ বড়ুয়া বলেন, অভিযোগ প্রত্যাহার সংক্রান্ত অফিশিয়াল কোনো কাগজ আমরা এখনো পাইনি। তবে অভিযোগকারী অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছে মর্মে বিভিন্ন মাধ্যমে শুনেছি।
নগরীর চান্দগাঁও থানায় দায়েরকৃত এজাহারে আব্দুল গণি অভিযোগ করেছেন, গত বছরের ১৩ জুলাই তার মেয়ে তসলিমা চিকিৎসক নাহিদার বাসায় কাজে যোগ দেয়। তিন মাস আগে থেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। বাসায় সশরীরে এসে এবং মোবাইলে চেষ্টা করেও তিনি মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না।
বৃহস্পতিবার মেয়ের খোঁজে ওই বাসায় আসার পর চিকিৎসক তাকে বিভ্রান্তিমূলক কথা বলেন। প্রায় দুই ঘণ্টা বাসার সামনে অবস্থানের পর তিনি পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ গিয়ে বাসা থেকে তসলিমাকে উদ্ধার করে। অভিযোগের ভিত্তিতে চিকিৎসক নাহিদাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আব্দুল গণি মেয়ের কাছ থেকে জানতে পারেন, গত ১৮ জুলাই ড্রেসিং টেবিলের নিচে পড়ে যাওয়া একটি কাজল ঘর পরিস্কারের সময় সে পায়। কৌতূহলবশত ওই কাজল চোখে ব্যবহার করে সে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে নাহিদা তাকে জখম করে এবং গলা টিপে ধরেন। নাহিদার শিশুসন্তান গৃহকর্মী তাসলিমার মাথায় হাত লাগিয়ে সেই আঙ্গুল আবার মুখে দেয় বলে শাস্তি হিসেবে একটি সেলুনে নিয়ে গিয়ে তাসলিমার চুলও ফেলে দেওয়া হয়। এ সময় মুখ খুললে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেন চিকিৎসক নাহিদা।
গৃহকর্মীর স্বজনদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার (২২ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও এলাকার মোহরায় ওই নারী চিকিৎসকের শ্বশুরবাড়িতে অভিযান চালিয়ে নির্যাতিত গৃহকর্মীকে উদ্ধারের পাশাপাশি চিকিৎসককেও গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সম্পাদক ও প্রকাশক :
Copyright © 2025 বাংলার প্রভাতী. All rights reserved.