আমলাদের কারণে রাজনীতিকরা ‘ম্লান’ হয়ে যাচ্ছেন বলে সংসদে উষ্মা প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা তোফায়েল আহমেদ।
সোমবার(২৮ জুন) সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় তিনি বলেন, “আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা যারা এই জাতীয় সংসদের সদস্য, এমন একজনও নাই যিনি এই করোনাকালীন সময়ে নিজস্ব অর্থায়নে বা যেভাবেই হোক গরীব দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়াননি। সবাই দাঁড়িয়েছে।
“আমি আমার নিজের এলাকায় ৪০ হাজার মানুষকে রিলিফ দিয়েছি। এখন, মাফ করবেন, কথা বলাটা কতটা যুক্তিসঙ্গত জানি না, এখন আমাদের জেলায় জেলায় দেওয়া হয়েছে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, মানুষ মনে করে আমরা যা দেই, এটা প্রশাসনিক কর্মকর্তারাই দেয়।“
প্রশাসনিক কর্মকর্তারা মাঠে যান নাই উল্লেখ করে প্রবীণ এই রাজনীতিক বলেন, “যাকে দেওয়া হয়েছে তিনি এখন পর্যন্ত যাননি। এটা কিন্তু ঠিক না। একটা রাজনৈতিক সরকার এবং রাজনীতিবিদদের যে কর্তৃত্ব কাজ, সেটা কিন্তু ম্লান হয়ে যায়।”
তিনি আরো বলেন, “পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন, ফেরাউনের সময়ও আমলা ছিল। এসব কথা বার্তা মানুষ পছন্দ করে না।”
তোফায়েল বলেন, “এমপিদের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স, দি এমপিস আর এভাব দ্য সেমিট্রিস।" এই বিষয়টা খেয়াল করতে হবে। প্রশাসনের কর্মকর্তারাও থাকবে, কিন্তু রাজনীতিক...
“আমার দুর্ভাগ্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়া বলেছিলেন, তিনি রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতি কঠিন করে দেবেন। তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কাজটা করেছেন এটা আমাদের দুর্ভাগ্য।”
তিনি বলেন, “যারা রাজনীতিবিদ, যারা নির্বাচিত প্রতিনিধি, তাদের জন্য নির্ধারিত স্থান যেখানে আছে, সেখানে তাদের থাকা উচিত। কারণ আমাদের জেলায় একজন সচিব যাবেন। আমরা তাকে বরণ করে নেব, ঠিক আছে। কিন্তু তারা যান না।
“একদিনের জন্য তারা দায়িত্বপ্রাপ্ত। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হন। তখন মন্ত্রীরা জেলার দায়িত্ব পালন করতেন। সেখানে গেলে কর্মীরা আসত। মন্ত্রীরা গ্রামে গঞ্জে যেতেন। কোথায় যেন সে দিনগুলো হারিয়ে গেছে।”
পরে জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদও একই সুরে বলেন, “আজকে দেশে কোনো রাজনীতি নেই। তোফায়েল আহমেদ যথার্থ বলেছেন। দেশে কোনো রাজনীতি নেই। রাজনীতি শূন্য, কোথাও রাজনীতি নেই। প্রত্যেকটা জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সচিবদের।
“মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিসিদের সাথে কথা বলেন। আর এমপি সাহেবরা পাশাপাশি বসে থাকেন, দূরে। তারপর বলে ডিসি সাব, আমি একটু কথা বলব প্রধানমন্ত্রীর সাথে। এই হচ্ছে রাজনীতিবিদদের অবস্থা।”
তিনি বলেন, “রাজনীতির মঞ্চগুলো আস্তে আস্তে ব্যবসায়ীরা দখল করছে। দেশ চালাচ্ছে কারা? দেশ চালাচ্ছেন জগৎশেঠরা। দেশ চালাচ্ছেন আমলারা। আমরা রাজনীতিবিদরা এখন তৃতীয় লাইনে দাড়িয়ে আছি। এই হচ্ছে আমাদের দুর্ভাগ্য। অথছ এই দেশ স্বাধীন করেছে রাজনীতিবিদেরা।“
পদ্মা সেতু, পায়রা বন্দর বা মেট্রো রেল করা হলেও রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ছাড়া জনগণ এটার সুফল পাবে না মন্তব্য করে ফিরোজ রশীদ আরও বলেন, “রাজনীতিবিদ ছাড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে পলিটিক্যাল কমিটমেন্ট থাকে না। বাতাস যেদিকে তারা সেদিকে ছাতা ধরে। ক্ষমতায় আমরাও ছিলাম, তিক্ত অভিজ্ঞতা আমাদেরও আছে।”
সম্পাদক ও প্রকাশক :
Copyright © 2025 বাংলার প্রভাতী. All rights reserved.