
প্রভাতী ডেস্ক: ঢাকাই ছবির আলোচিত নায়িকা পরীমণি ফেসবুক পোস্টে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার যে অভিযোগ এনেছেন, তা উত্তরা বোট ক্লাবের সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে বলে জানিয়েছেন এ অভিনেত্রী নিজেই। রোববার রাত পৌনে ১১টার দিকে তিনি সংবাদমাধ্যমে এ কথা বলেছেন। এসময় বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন সদা হাস্যোজ্জ্বল পরীমনি
এর আগে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসে নিজেকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করেন। তখন অবশ্য কার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ, তা বলেননি পরীমণি। এর প্রতিকার চেয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সহায়তাও চেয়েছেন। পরে নিজের বনানীর বাসা থেকে সংবাদমাধ্যকে পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন পরীমণি।
তিনি জানান, পরীমনি জানান, ১০ জুন রাতে পারিবারিক বন্ধু অমি ও ব্যক্তিগত রূপসজ্জাশিল্পী জিমির সঙ্গে বাইরে বের হয়েছিলেন তিনি। রাত তখন ১২টা পেরিয়েছে। বন্ধুটি তাঁদের নিয়ে যান আশুলিয়ার একটি ক্লাবে। সেখানে মদ্যপানরত কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে পরীমনির পরিচয় করিয়ে দেন অমি। সেসময় নাসির উদ্দীন মাহমুদ নিজেকে উত্তরা বোট ক্লাবের (ঢাকা বোট ক্লাব) সাবেক সভাপতি হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি নিজেকে বেনজীর আহমেদের (পুলিশ মহাপরিদর্শক) বন্ধু/ভাই বলেও দাবি করেন।
‘সেখানে নাসির ইউ. মাহমুদ তাকে মদ খেতে অফার করেন। তিনি রাজি না হলে তাকে জোর করে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে তাঁর মুখে পানীয়র গ্লাস চেপে ধরে এবং শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। এ সময় মারধর করা হয় পরীর সঙ্গে থাকা জিমিকেও। পরীমণি বাধা দিলে তাকে হত্যাচেষ্টাও চালানো হয়। হঠাৎ পরীমণি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এসময় তাকে লাথিও মারেন নাসির উদ্দিন।
পরীমণি আরো জানান, এ ঘটনার পর তারা রাতেই বনানী থানায় যান। সেখানে অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ তাদের টেস্টের জন্য হাসপাতালে যেতে বলে। পরে পরীমণি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে যাওয়া শুরু করেন। যাওয়ার পথেই তিনি কিছুটা সুস্থবোধ করলে ফিরে বাসায় চলে আসেন।
বাসায় ফেরার পর তিনি দুইদিন অসুস্থ ছিলেন। এরপর তিনি বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোথাও থেকে কোনো সাড়া পাননি। পরে রোববার(১৩ জুন) রাতেই নিজের ফেসবুক পেজে এ স্ট্যাটাস দেন।
ফেসবুকে পরীমনি লিখেছেন, ‘আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমাকে রেপ এবং হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই। এই বিচার কোথায় চাইব? কে করবে সঠিক বিচার?’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মা’ সম্বোধন করে পরীমনি লিখেছেন, ‘চার দিন ধরে থানা থেকে শুরু করে আমাদের চলচ্চিত্র বন্ধুদের কাউকে পাই না মা। যাদেরকে পেয়েছি, সবাই বিস্তারিত ঘটনা জেনে “দেখছি” বলে চুপ হয়ে যায়!’
কোথাও প্রতিকার না পেয়ে পরীমনি লিখেছেন, ‘আমি চুপ করে থাকতে পারি না। আজ আমার সঙ্গে যা হয়েছে, তা যদি “আমি মেয়ে”, “লোকে কী বলবে” এই গিলানো বাক্য মেনে নিয়ে চুপ হয়ে যাই, তাহলে অনেকের মতো আমিও কেবল তাদের দল ভারী করতে চলেছি হয়তো। আফসোস ছাড়া কারও কী করার থাকবে তখন! আমি তাদের মতো কি চুপ করে থাকতে পারি, মা? আমি তো আপনাকে দেখিনি চুপ থেকে কোনো অন্যায় মেনে নিতে!’
শৈশবে মা হারানোর ঘটনা উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, ‘আমার মা যখন মারা যান, তখন আমার বয়স আড়াই বছর। এত দিনে কখনো আমার এক মুহূর্ত মাকে খুব দরকার মনে হয়নি। আজ মনে হচ্ছে, ভীষণ রকম মনে হচ্ছে, মাকে দরকার, একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরার জন্য দরকার। আমার আপনাকে দরকার মা। আমার এখন বেঁচে থাকার জন্য আপনাকে দরকার মা। মা, আমি বাঁচতে চাই। আমাকে বাঁচিয়ে নাও মা।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বলেন, ‘পরীমনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার বিচার চান তিনি।’