প্রভাতী ডেস্ক : স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা নতুন মামলায় প্রধান আসামি সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আকতার এখন কারাবন্দি।
রিমান্ডে তেমন একটা মুখ খোলেননি পুলিশের এই সাবেক কর্মকর্তা। দুই ছেলে-মেয়েরও হদিস দিতে চাননি প্রথমে। পিবিআইয়েরর তদন্ত কর্মকর্তাদের জেরায় বারবার একটি কথা বলেই এড়িয়ে গেছেন সব, ‘আপনারা যখন সবই জানেন, তো আমাকে জিজ্ঞেস করার কী আছে?’
তাই স্ত্রী মিতুকে কী কারণে হত্যা করলেন বাবুল? তা এখনো রহস্যের বেড়াজালেই আটকে আছে। যদিও পিবিআইয়ের দাবী, ভারতীয় নারী এনজিও কর্মকর্তা গায়েত্রী ওমর সিংয়ের সঙ্গে পরকিয়ায় জড়িয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটান বাবুল।
তবে এ বিষয়ে নিহত মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন দাবী করেছেন, নিজের কালো অধ্যায় প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ভয়ে স্ত্রী মিতুকে হত্যা করেছেন বাবুল আকতার। কারণ তার অনৈতিক কর্মকাণ্ড জেনে গিয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন মিতু।
মিতুর বাবার ভাষ্যে, জঙ্গি গ্রেফতার, জঙ্গি আস্তানা ও অস্ত্র উদ্ধার করে সারা দেশে প্রশংসিত হয়েছিলেন তৎকালীন পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আকতার। যা তার ইমেজ ও পজিশনকে অনেক উপরে নিয়ে যায়। কিন্তু পরকীয়াজনিত ঘটনাটি তার স্ত্রীর মারফত প্রকাশ হয়ে যেতে পারে, সেই ভয়ে সর্বদা শঙ্কিত ছিলেন বাবুল। বিষয়টি ধামাচাপা দিতেই ভাড়াটে খুনি দ্বারা মিতুকে হত্যা করেন বাবুল।
শনিবার(২২ মে) গণমাধ্যমকে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘বাবুল আকতার তৎকালীন পুলিশের একজন প্রভাবশালী কর্মকর্তা ছিলেন। জঙ্গি তৎপরতা রুখে দিতে প্রশংসনীয় কাজ করেছে সে। কিন্তু এসব ভালো কাজের পাশাপাশি তার অনেক খারাপ কাজও ছিল। সেগুলো তার স্ত্রী মানে আমার মেয়ে মিতু জেনে গিয়েছিল। ’
পুলিশের এই সাবেক কর্মকর্তা বলেন, ‘ভারতীয় এনজিওকর্মী গায়েত্রী অমর সিংয়ের সঙ্গে বাবুলের অনৈতিক সম্পর্কসহ আরো কিছু অপরাধের কথা জেনে যায় মিতু। বিষয়গুলো সে আমাদের জানায়। তখন বাবুলকে ছেড়ে মিতুকে ঢাকায় চলে আসতে পরামর্শ দেই আমরা। কিন্তু দুই সন্তানের দিকে তাকিয়ে রাজি হয়নি মিতু। সে আমাদের বলে, বাবুল একদিন ফিরে আসবে। কিন্তু বাবুল তো আর ফেরেনি। এক সময় বাবুলের অনৈতিক কাজের মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে মিতু মুখ খুলতে শুরু করে। এসব কাজ থেকে বিরত থাকতে বাবুলের সঙ্গে ঝগড়াও বাধায়। প্রতিবাদ করে। কিন্তু বাবুল তার কথা না শুনে উল্টো মিতুর ওপর নির্যাতন শুরু করে।’
‘নিজের অপকর্মের বিরুদ্ধে মিতুর প্রতিবাদী কণ্ঠ বাবুলকে ভীত করে তুলে। মিতু যদি তার এসব অপকর্ম ফাঁস করে দেয় তাহলে তার সুনাম ও পজিশন সবকিছু ধুলায় মিশে যাবে - এমন আশঙ্কায় ভুগতে থাকে বাবুল। তাই নিজের পজিশন ও সুনাম রক্ষায় ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে আমার মেয়েকে হত্যা করায় বাবুল।’
মিতুকে হত্যার উদ্দেশ্য নিয়ে এখনো সন্দিহান পিবিআই। কারণ স্ত্রী হত্যার কথা এখনো স্বীকার করেননি বাবুল আকতার। আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দেননি।
তবে বাবুল আকতারই যে মিতু হত্যাকাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড তার যথেষ্ট প্রমাণ পিবিআইয়ের কাছে আছে। তিনি টাকা দিয়ে এবং সোর্স কামরুল ইসলাম শিকদার মুছাকে দিয়ে হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছেন।
যদিও এতে সন্তুষ্ট নয় পিবিআই। মিতু হত্যায় বাবুলের প্রকৃত উদ্দেশ্য উদঘাটনে এখনো কাজ করছে তদন্ত কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘মিতু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বাবুল জড়িত, শুধু এটা প্রমাণ করলেই হবে না। কোন উদ্দেশ্যে বাবুল আকতার মিতুকে হত্যা করেছেন, সেটাও বের করতে হবে। আমরা চেষ্টা করছি মিতু হত্যাকাণ্ডের মোটিভ বের করার জন্য। আশা করি তদন্ত শেষ হলে মোটিভ জানা যাবে।’
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন ভোরে ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিতে বের হওয়ার পর চট্টগ্রাম শহরের জিইসি মোড়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় মিতুকে। তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আকতারের বিরুদ্ধে গত ১২ মে পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন। সেই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে সেদিনই বাবুলকে আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে ৫ দিনের রিমান্ডে পাঠান।
সম্পাদক ও প্রকাশক :
Copyright © 2025 বাংলার প্রভাতী. All rights reserved.