Search

শনিবার, ১লা নভেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শনিবার, ১লা নভেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ শনিবার, ১লা নভেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ৯ই জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি

অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন: ছয় মাসে সরকারের ঋণ ৬৪ হাজার কোটি টাকা

প্রভাতী ডেস্ক : কোভিড-১৯ মহামারিসহ সার্বিক ব্যয় মেটাতে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৬ মাসে প্রায় ৬৪ হাজার (৬৩ হাজার ৮২৫) কোটি টাকা ঋন করেছে সরকার।

এর মধ্যে বিদেশ থেকে নেওয়া ঋণের হার হচ্ছে ৩০ শতাংশ। বাকি ৭০ শতাংশ হচ্ছে অভ্যন্তরীণ খাত (ব্যাংক, সঞ্চয়পত্র, ট্রেজারি বিল) থেকে নেওয়া হয়েছে। ঋণ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অভ্যন্তরীণ খাত থেকে গত বছরের তুলনায় ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বেড়েছে। তবে কমেছে বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও দেশ থেকে ঋণ নেওয়া হার। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঋণ বুলেটিন থেকে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।

ঋণ নেওয়ার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, অভ্যন্তরীণ এবং সার্বিক ঋণ গ্রহণ মাত্রার হার অর্থনীতিতে এখনো কম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। পাশাপাশি ঋণগ্রহণ ও পরিশোধকারী হিসাবে বাংলাদেশ শক্ত অবস্থানে আছে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, বিদেশি ঋণ গত বছরের তুলনায় কম নেওয়ার কারণ হচ্ছে ঋণের অর্থ ব্যবহার করতে পারছি না। অর্থাৎ কাজ হচ্ছে না। যা অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক নয়।

তিনি আরো বলেন, দেশের রাজস্ব আদায়ের গতি ভালো নয়। অন্যদিকে করোনার কারণে নানা ধরনের প্রণোদনা কর্মসূচি বাস্তবায়ন হচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিও চলছে। যে কারণে অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। তবে সার্বিক ঋণ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে আশঙ্কার কিছু নেই। বাজেট ঘাটতি ৬ শতাংশের বেশি হলেও সমস্যা হবে না।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় গত দুই বছর সরকারের ব্যয় বেড়েছে। কারণ করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। যেখানে আর্থিক ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এজন্য সম্প্রতি অর্থ বিভাগ থেকে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় না করার জন্য একটি নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। চলতি অর্থবছরে সরকারের ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা।

এই ঋণ নেওয়া ঠিক করা হয় বাজেট ঘাটতির হিসাব করে। যে পরিমাণ বাজেট ঘাটতি থাকে সেটি পূরণ করতে ঋণ নেওয়া হয়। ঋণ মূলত দুটি উৎস থেকে গ্রহণ করা হয়। একটি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ খাত- ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র। দ্বিতীয়টি হচ্ছে বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও দেশ। তবে দুটি খাত থেকে অর্থবছরের ছয় মাসে ঋণ নেওয়া হয়েছে ৬৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। এটি লক্ষ্যমাত্রার ৩৮ শতাংশ।

সূত্র মতে, ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৮২ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ঋণ নেওয়া হয়েছে ২৪ হাজার ৮৮০ টাকা। এটি লক্ষ্যমাত্রার ৩০ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩০ হাজার ৩০২ কোটি টাকা। ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণ নেওয়া হয়েছে ২০ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। তবে সঞ্চয়পত্র ব্যুরোর হিসাবে গত মার্চ পর্যন্ত অর্থাৎ ৯ মাসে (জুলাই থেকে মার্চ) ৮৫ হাজার ৯৯০ কোটি ৬৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এটি লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২০০ শতাংশের বেশি। জানা গেছে, ব্যাংকিং খাতে আমানতের সুদের হার ৫ শতাংশ বা এর নিচে অবস্থান করছে। তবে সে তুলনায় সঞ্চয়পত্র সুদের হার ডাবল ডিজিট রয়েছে। ফলে আমানতকারীরা এখন সঞ্চয়পত্রকে একমাত্র বিনিয়োগের উপযুক্ত ক্ষেত্র মনে করছে। এজন্য সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে গেছে।

ঋণ নেওয়া পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ৬ মাসে ৫ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে ১২ শতাংশ, পারিবারিক সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়া হয় ৩৫ শতাংশ, তিন মাস মেয়াদি সঞ্চয়পত্র থেকে ২৩ শতাংশ, পেনশনার সঞ্চয়পত্র থেকে ৮ শতাংশ, ওয়েজ আর্নার সঞ্চয়পত্র থেকে ৪ শতাংশ এবং অন্যান্য খাত থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে এক শতাংশ ঋণ। এ সময় অন্যান্য খাত থেকে নেওয়া হয়েছে ৩৯৭ কোটি টাকা।

করোনার কারণে সরকারের সার্বিক ব্যয় বেড়ে গেছে। ফলে দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ পেতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। বিভিন্ন দাতা সংস্থাগুলোর কাছে চিঠি দিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে। এরই মধ্যে বেশকিছু সাড়াও পাওয়া গেছে।

চলতি অর্থবছরে বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৭২ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা। এর থেকে অর্থবছরের ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) বিদেশি ঋণ পাওয়া গেছে ১৮ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা। এটি লক্ষ্যমাত্রার ২৬ শতাংশ এবং মোট ঋণের ৩০ শতাংশ। তবে গত বছরের তুলনায় বিদেশি ঋণ পাওয়া হার কমেছে।

ঋণ বুলেটিন সূত্র মতে, সবচেয়ে বেশি সহায়তা করছে বিশ্বব্যাংক। ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে গত ছয় মাসে বিদেশ থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রার ৩৮ শতাংশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক এ সংস্থা। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি)। এ সংস্থা ঋণ দিয়েছে ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ। এছাড়া জাপান একটি বড় সহায়তার অবস্থানে আছে বিদেশি ঋণের ক্ষেত্রে।

সেখান থেকে ঋণ পাওয়া গেছে লক্ষ্যমাত্রার ১৭ শতাংশ। রাশিয়া থেকে ঋণ পাওয়া গেছে ৬ শতাংশ এবং চীন দিয়েছে ৩.৮৯ শতাংশ। পাশাপাশি চায়না (বিসি) থেকে পাওয়া গেছে ৩ শতাংশ এবং ভারত দিয়েছে ১ শতাংশ।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print