রবিবার, ৬ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রবিবার, ৬ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ রবিবার, ৬ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২২শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১০ই মহর্‌রম ১৪৪৭ হিজরি

মেজর সিনহাকে ২টি গুলি করেন প্রদীপ দাশ

প্রভাতী ডেস্ক : পুলিশের গুলিতে নিহত মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের মরদেহের ময়নাতদন্তেও চারটির বেশি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। এর আগে সুরতহাল প্রতিবেদনে মরদেহে ৬টি গুলির চিহ্ন পায় পুলিশ। মেজর সিনহার মৃত্যু নিশ্চিত করতে পর পর দুটি গুলি করেছেন টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। এর আগে মেজর সিনহা মো. রাশেদকে গাড়ি থেকে নামিয়ে ৪ রাউন্ড গুলি করে টেকনাফের বাহারছড়া ফাঁড়ির ইনচার্জ লিয়াকত।

আহত অবস্থায় সিনহা মাটিতে পড়ে থাকলে খবর পেয়ে ওসি প্রদীপ টেকনাফ থানা থেকে এসে তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে আরো ২ রাউন্ড গুলি করেন।

কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কে গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে পুলিশের গুলিতে সিনহা রাশেদ নিহত হওয়ার পর বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের উপ পরিদর্শক নন্দ দুলাল রক্ষিত যে মামলা করেন তাতে বলা হয়েছে, সেই রাতে পরিদর্শক লিয়াকত চারটি গুলি করেন। পরদিন নিহত সিনহার লাশের সুরতহাল তৈরি করেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার উপ পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম। তাঁর রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, মেজর সিনহার মরদেহে ৬টি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে পরিদর্শক সাইফুল গতকাল শনিবার (৮ আগস্ট) জানান, ‘আমি মেজর সিনহার মরদেহ তন্ন তন্ন করে দেখেছি। মরদেহে আমি মোট ছয়টি ফুটো দেখতে পেয়েছি, যা সুরতহাল রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। ’

টেকনাফ থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলা এবং সুরতহাল রিপোর্টে বর্ষিত গুলি ও মরদেহে গুলির চিহ্ন নিয়ে ভিন্ন তথ্যের পর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় ছিলেন তদন্তকারীরা। গতকাল শনিবার কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাবের হাতে পৌঁছেছে। ময়নাতদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও র‌্যাবের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে। তবে এই তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে যে সিনহার মরদেহে চারটির অধিক গুলির চিহ্ন মিলেছে।

অন্যদিকে প্রত্যক্ষদর্শী ইজি বাইক (টমটম) চালক সরওয়ার কামাল শনিবার(৮ই আগষ্ট) জানান, পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত গুলি করার পর মোবাইলে বলেন, ‘স্যার তিনটি করে দিয়েছি। ’ টমটম চালক আরো জানান, এর কিছুক্ষণ পর টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ এসে মাটিতে লুটিয়ে পড়া মেজর সিনহার বুক-পিঠে লাথি মেরে কুত্তার বাচ্চা বলে গালি দিতে দিতে আরো দুটি গুলি করেন।

টেকনাফের বাহারছড়ার শামলাপুর নয়া পাড়ার বাসিন্দা সরওয়ার কামাল মোবাইল ফোনে জানান, তিনি গত ৩১ জুলাই সন্ধ্যার পর শামলাপুর লামার বাজারে গিয়ে পরদিন ঈদুল আজহা উপলক্ষে একটি পাঞ্জাবি কেনেন। এরপর মেরিন ড্রাইভে ঘটনাস্থলের পাশে ব্রিজে বসে সিগারেট টানছিলেন। এমন সময় তিনি দেখেন পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত ও তদন্ত কেন্দ্রের ক্যাশিয়ার (কনস্টেবল) মামুন কক্সবাজারমুখী একটি কার থামান। কার থেকে এ সময় এক ব্যক্তি নামতেই পরিদর্শক লিয়াকত পর পর তিনটি গুলি করেন। এরপর ওই ব্যক্তির অন্য সঙ্গী নামতেই তাঁর পা লক্ষ্য করে একটি গুলি করেন। তবে সেই গুলি তাঁর পায়ে লেগেছে কি না তিনি জানেন না। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে ওসি প্রদীপ এসে মেজর সিনহার শরীরে দুই রাউন্ড গুলি করেন।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঘটনাস্থলে চারটি গুলির হিসাবই মামলার মাধ্যমে দিয়েছেন ওসি প্রদীপ। ফলে তিনিসহ আর কেউ বেশি গুলি করে থাকলে সেটিও এখন বড় অপরাধ হয়ে যাবে। কারণ সরকারি প্রতিটি গুলিরই হিসাব দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতে পারে- তাহলে বেশি গুলি কোথা থেকে এলো? সেই গুলি কি অবৈধ ছিল?

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print