শুক্রবার, ১৮ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শুক্রবার, ১৮ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ শুক্রবার, ১৮ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ৩রা শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২২শে মহর্‌রম ১৪৪৭ হিজরি

নাচনেওয়ালী বেবীর রংমহলে নষ্ট হচ্ছে বাকলিয়ার যুবসমাজ !

নাচনেওয়ালী মমতাজ বেগম বেবী

বিশেষ প্রতিনিধি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সারাদেশে প্রশাসন মাদক এবং বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ নির্মূলে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু কতিপয় মাদক ব্যবসায়ী ও অসামাজিক কার্যকলাপে সম্পৃক্ত ব্যক্তি সমাজে ভদ্রতার মুখোশ পরে প্রশাসনের রক্তচক্ষুর আড়ালে তাদের ঘৃণ্য কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এসব মুখোশ পরে থাকা ছদ্মবেশী অপরাধীদের মধ্যে অনেক বড় বড় রাঘববোয়ালও রয়েছে। এসব মুখোশধারীদেরকে প্রশাসনের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

চট্টগ্রামের পশ্চিম বাকলিয়ায় এমনই একজন মুখোশধারী মাদক ও দেহ ব্যবসায়ী মমতাজ বেগম বেবী প্রকাশ নাচনেওয়ালী বেবীর কবল থেকে এলাকার কিশোর ও যুবসমাজকে রক্ষা করতে পুলিশ কমিশনারের দ্বারস্থ হয়েছেন এলাকাবাসী। এই ভয়ংকর মাদক ও দেহ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে এলাকার সমাজসেবীরা গণস্বাক্ষর নিয়ে পুলিশ কমিশনারের নিকট লিখিত অভিযোগ করেন। স্থানীয় কাউন্সিলর একেএম আরিফুল ইসলাম ডিউক এবং আওয়ামীলীগ নেতা হজী শফিকুর রহমানসহ অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি উক্ত অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করেন। অভিযোগটি গ্রহণ করে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চকবাজার থানার অফিসার ইনচার্জের নিকট প্রেরণ করা হয়।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, রসুলবাগ আবাসিক এলাকার পাশে আরামবাগ আবাসিক এলাকার সবুর কলোনীতে ভাড়া বাসায় থাকে বেবী। নিজের বসবাসের জন্য একটি ঘর ছাড়া আরো একটি ঘর নিয়ে সেখানে ২-৩জন মেয়ে রেখে সকল প্রকার অবৈধ কর্মকান্ড চালিয়ে যায় বেবী। সকল প্রকার মাদক তার কার কাছে পাওয়া যায়। কেউ এসবের প্রতিবাদ করলে তাকে মিথ্যা ধর্ষণ মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় বেবী। তাই বেবীর এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পায় না।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এই নাচনেওয়ালী মমতাজ বেগম বেবীর গ্রামের বাড়ী আনোয়ারায়। সে হাইলধর গ্রামের ইছাখালী এলাকার ইন্দু মিয়ার মেয়ে। সে ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন যাত্রাপালায় নাচতো। তাই তাকে নাচনেওয়ালী বেবী বললে সবাই চেনে। প্রায় ২০ বছর ধরে সে এই পেশায় জড়িত। বিভিন্ন যাত্রাপালায় মেয়েও সরবরাহ করে বেবি। জানা যায়, বেবী আগে যাত্রাপালা নিয়ে কাজ করলেও ৩-৪ বছর ধরে মাদক এবং নারী ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়ে। আনোয়ারার কয়েকজন চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীর সাথেও বেবীর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। বেবী তাদের বড় বড় চালান বহণ করার পাশাপাশি নিজেও খুচরা ইয়াবা বিক্রি করে। সে খুবই সুচতুর বিধায় প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা এবং এলাকার মাস্তানদেরকে নিয়মিত মাসোহরা দিয়ে তার অবৈধ ব্যবসা চালায়।

এলাকার সমাজসেবক ও ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, এই নাচনেওয়ালী বেবীর কারণে আমাদের ছেলে-মেয়েরা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ ২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও বাকলিয়া আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়ের পাশে এমন জঘন্য অপকর্ম চলতে দেওয়া যায় না। বেবীর দালালেরা কৌশলে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদেরকে বেবির রংমহলে নিয়ে তাদের ভবিষ্যত অন্ধকার করে দিচ্ছে। আমি এসবের প্রতিবাদ জানাচ্ছি তাই বেবী আমার বিরুদ্ধে ৩-৪টা মিথ্যা মামলা দিয়েছে। কিন্তু যতই মামলা হামলা হউক বেবির এই অপকর্মে আমি ছাড় দিবো না। প্রশাসন যতদিন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে না ততদিন সোচ্চার থাকবো।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক আওয়ামীলীগ নেতা বলেন, এলাকায় এই ধরণের নোংরামির কারণে আমাদের যুব সমাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। হাত বাড়ালেই তারা পাচ্ছে মাদক ও নারী। বেবীর এসব অপকর্ম বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

ছাত্রলীগ নেতা আশেকুর রহমান রোহিত বলেন, এলাকার কিছু আওয়ামী নামধারী পাতিনেতা মোটা অংকের মাসোহারা নিয়ে এই নাচনেওয়ালী বেবিকে তার অপকর্ম চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। তারা বেবীর অপকর্ম চালাতে প্রশাসনের কাছে লবিং তদবীরও করে। আমরা ছাত্রসমাজ বেবীর এসব অপকর্ম আর সহ্য করবো না। বেবির মাদক ও নারী ব্যবসা বন্ধ করতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর একেএম আরিফুল ইসলাম ডিউক বলেন, আমার এলাকায় মাদক নির্মূলে আমি খুবই আন্তরিক। ঐ মহিলার অসামাজিক কার্যকলাপের কথা এলাকাবাসী আমাকে অবহিত করেছেন। কিন্তু আমার তো প্রশাসনিক ক্ষমতা নেই তাই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারিনি। তাই এসব অপকর্ম বন্ধ করতে প্রশাসনকে অনুরোধ জানিয়েছি। এলাকাবাসী সিএমপি কমিশনার মহোদয়কে গণস্বাক্ষর নিয়ে যেই অভিযোগ দিয়েছেন সেই অভিযোগে আমিও স্বাক্ষর করেছি। আমার আশা প্রশাসন খুব দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এই ব্যাপারে জানতে চাইলে চকবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ জানান, এলাকাবাসী এই মহিলার অসামাজিক কর্মকান্ড নিয়ে আমাকে অনেক সময় ফোন করে জানায়। আমি ফোর্স প্রেরণ করলে কাউকে পাওয়া যায় না। এলাকাবাসী কমিশনার স্যারকে যেই অভিযোগ প্রদান করেছে সেটি আমার কাছে পাঠানো হয়েছে। অতি শীগ্রই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print