বৃহস্পতিবার, ১৩ই মার্চ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বৃহস্পতিবার, ১৩ই মার্চ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ বৃহস্পতিবার, ১৩ই মার্চ ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১২ই রমজান ১৪৪৬ হিজরি

এক পলকে প্রেমে পড়া প্রেম নয়- শারীরিক চাহিদা: বিজ্ঞানের গবেষণা

পৃথিবীতে বরাবরই ‘লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট’-কে সাহিত্য, চলচ্চিত্র থেকে শুরু করে সবখানে মহিমান্বিত করা হয়েছে। অনেকেই প্রথম পলকে প্রেমে পড়ে সম্পর্ক গড়ে বিয়ে পর্যন্ত করেছেন।

কিন্তু বিজ্ঞান বলছে, প্রথম দেখার প্রেম বা ক্রাশ প্রাথমিক মোহ আর কামবোধ ছাড়া কিছুই নয়। অর্থাৎ সেই চিরন্তন, জীবন পণ করা স্বার্থহীন সত্যিকারের ভালোবাসার কোনো ভরসা এই জাতীয় প্রেমে থাকে না।

তবে ফলাফল ব্যতিক্রমী হতেও পারে। কিন্তু সেটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। প্রাথমিক পর্যায়ে শুধু কামনার বিষয়টিই প্রধান এ জাতীয় প্রেমে পড়ার ক্ষেত্রে।

ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত একটি জার্নালে সম্পর্ক গবেষণার একটি সমীক্ষায় পাঁচশ ডেটিং সাক্ষাৎকার নিয়ে সেগুলো বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ২০ বছরের কম বয়সী ২৫০ জন নারী-পুরুষ অংশ নেন তাতে।

তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় প্রথম দেখা ও প্রেমে পড়ার অভিজ্ঞতার বিষয়ে। প্রথম দেখায় প্রেমের উপাদানগুলোর মধ্যে কী কী ছিল তাদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, এসব নিয়েই বিজ্ঞান নির্ভর বিশ্লেষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা।

প্রথম দেখাতেই কী হয়? নারী কিংবা পুরুষের ওপর কি শুধু শারীরিক আকর্ষণই বেশি বোধ হয়? নাকি প্রতিশ্রুতি, বিশ্বাস, পাশে থাকার অঙ্গীকার, সহানুভূতি, দায়িত্ব এসব ভাবনাগুলোও কাজ করে।আসলে ওইটুকু স্বল্প সময়ের মধ্যে তা কি সম্ভব?

ভালোবাসার তো নানা রকম দিক থাকে। প্রথম দেখায় প্রেমের উপাদান নিয়ে মনোবিজ্ঞানীরা কাটাছেঁড়া করে জানিয়েছেন, শারীরিক আকর্ষণটাই মূল বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। প্রথম দেখার প্রেমে প্রতিশ্রুতি আর মানসিক ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি প্রায় থাকে না বললেই চলে।  ফলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বেশি দূর পর্যন্ত গড়ায়ও না এ ধরনের সম্পর্ক। যদি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই বাস্তব ব্যাপারগুলোও চলে আসে তবে আশা থাকলেও থাকতে পারে।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারীরা স্বীকার করেছেন, প্রথম দেখার সম্পর্কের ক্ষেত্রে শারীরিক চাহিদা বেশি থাকে। তাই বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, প্রথম দেখার প্রেম প্রাথমিক স্তরের মোহ ছাড়া আর কিছুই নয়। আরো বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, প্রথম দেখায় মুগ্ধ হওয়ার ব্যাপারটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পারস্পরিক হতে দেখা যায় না।

ফেসবুকে বা ফোনে কথা বা আলাপচারিতার পর যেই অভিসারে গেলেন, আপনি বেশিরভাগ সময় হতাশ হবেন। কারণ, তাকে দেখে হয়ত আপনার শরীরে হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ খেলে গেল, আপনার সাংঘাতিক ভালো লেগেছে, আপনি অসম্ভব মোহাবিষ্ট হয়ে পড়লেন। কিন্তু অপরজনের হয়ত ‘পালাতে পারলে বাঁচে’ দশা অথবা হয়ত তিনি আপনাতে ‘চোখের পলক পড়ে না’ এমন মুগ্ধ হয়ে গেলেন, কিন্তু আপনার মোটেই ভালো লাগছে না, এমন হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

আর দু’জনেরই দু’জনকে ভালো লেগে গেলে? মাস গড়ালেই উত্তর পেয়ে যাবেন। তবে এর ব্যতিক্রম কি নেই? আছে। আসলে, ভালোবাসার সম্পর্কে একটা নিরলস, সঙ্গতিপূর্ণ লেগে থাকা চাই, উভয়েরই।

এক মুহূর্তের ভালোলাগা উবে যেতে বেশিক্ষণ লাগে না। কিন্তু অনেক দিনের চেষ্টা দিয়ে, যত্ন দিয়ে, পাশে থাকা আর মন বুঝতে চাওয়ার প্রয়াস দিয়ে ভালোবাসার বিশ্বাসের যে ভিত্তি প্রস্তুত হয়, তাতেই টিকে যেতে পারে সম্পর্ক। আর হ্যাঁ বন্ধুত্বটাও কিন্তু খুবই জরুরি।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print