Search

শনিবার, ১৩ই ডিসেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শনিবার, ১৩ই ডিসেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ শনিবার, ১৩ই ডিসেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ২১শে জমাদিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি

পিয়ন পদে চাকরি নেন, পরে পদোন্নতি পেয়ে অফিস সহকারী হন তিনি

শতাংশের হিসেবে ঘুষ নিতেন সিলেটের সেই ‘কোটিপতি অফিস সহকারী’

ছাত্রলীগ ঘনিষ্ঠ এক প্রভাবশালী ঠিকাদারের সঙ্গে রিয়াজের গভীর সম্পর্ক

পিয়ন পদে চাকরি পেয়েছিলেন মো. রিয়াজ মিয়া। পদোন্নতি পেয়ে ছাতক উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরে (এলজিইডি) অফিস সহকারী হন। সবকিছু ছাপিয়ে তার বড় পরিচয়—‘কোটিপতি অফিস সহকারী।’ কার্যালয়টিকে ঘুস ও দুর্নীতির আখড়া বানিয়ে পেয়েছেন এই নাম।

স্থানীয় একাধিক সূত্রের দাবি, রিয়াজ মিয়া প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, ঠিকাদার এবং অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সঙ্গে মিলে একটি দুর্নীতিবান্ধব সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন। সরকারি নথিপত্র গোপনে ঠিকাদারদের সরবরাহ, বিল অনুমোদনে ঘুস আদায়সহ নানা অপকর্মে তিনি সরাসরি জড়িত বলে একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

ভুক্তভোগী কয়েকজন ঠিকাদার অভিযোগ করেন, প্রতিটি প্রকল্পের বিল পাশ করাতে হলে রিয়াজের নির্দেশেই দিতে হয় শতকরা দুই শতাংশ ঘুস। শতকরা হিসেবে ঘুস না দিলে ফাইল আটকে রাখা হয়। বিল স্থগিতেরও ভয় দেখানো হয়। এতে ঠিকাদারদের নাজেহাল হতে হয় এবং প্রকল্প বাস্তবায়নেও দেরি হয়।

সূত্র জানিয়েছে, রিয়াজ মিয়া প্রায় এক যুগ ধরে ছাতক এলজিইডি অফিসে বহাল আছেন। এর মধ্যে প্রায় আট বছর তিনি পিয়ন পদে কর্মরত ছিলেন। ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর অফিস সহকারী হিসাবে পদোন্নতি পান।

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, তিন বছর পূর্ণ হলে অন্যত্র বদলি হওয়া বাধ্যতামূলক হলেও রিয়াজ নানা কৌশলে দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে রয়ে গেছেন। অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাব ও মোটা অঙ্কের ঘুসের বিনিময়ে তিনি বদলি ঠেকিয়ে রেখেছেন।

স্থানীয়ভাবে আলোচিত বিষয় হলো ছাত্রলীগ ঘনিষ্ঠ এক প্রভাবশালী ঠিকাদারের সঙ্গে রিয়াজের গভীর সম্পর্ক। অভিযোগ রয়েছে, ওই ঠিকাদারের কাজের ফাইল ও বিল প্রক্রিয়ায় তিনি বিশেষ সুবিধা দেন এবং বিনিময়ে আর্থিক লেনদেনও হয় নিয়মিত।

স্থানীয় সচেতন মহলের দাবি, এলজিইডির মতো গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে এক কর্মচারীর দীর্ঘদিন একই স্থানে বহাল থাকা এবং ঘুস-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠা প্রশাসনিক তদারকির ব্যর্থতারই বহিঃপ্রকাশ। তারা দ্রুত দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করে রিয়াজ মিয়াসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

একজন ঠিকাদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘রিয়াজ ছাড়া এ অফিসে কোনো কাজ হয় না। বিল পাশ থেকে শুরু করে ফাইলের অগ্রগতি-সব কিছুতেই তার হস্তক্ষেপ। তিনি নিজেকে প্রকৌশলী হিসাবেই উপস্থাপন করেন।’

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রিয়াজ মিয়া নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ‘সব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছি। আমার নিয়ন্ত্রণে অফিস থাকার প্রশ্নই আসে না।’

এ বিষয়ে ছাতক এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি নতুন যোগ দিয়েছি। সে অনেকদিন ধরে এখানে আছে, তাই মানুষ ভাবে অফিসটা তার নিয়ন্ত্রণে। কর্তৃপক্ষ চাইলে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারে।’

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print