Search

বৃহস্পতিবার, ১১ই ডিসেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বৃহস্পতিবার, ১১ই ডিসেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ বৃহস্পতিবার, ১১ই ডিসেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৯শে জমাদিউস সানি ১৪৪৭ হিজরি

কোন প্রকার ল্যাব টেস্ট না করিয়ে চিকনগুনিয়া দাবী করে চিকিৎসা করেন

চট্টগ্রামের বাকলিয়ায় ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় চোখ হারানোর অভিযোগে আদালতে মামলা

১৮টি অখ্যাত ঔষধ কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ রয়েছেন এই ডাক্তার

চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানাধীন কালামিয়া বাজার এলাকায় স্থানীয় এক ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার বলি হলেন জয়নাল আবেদীন নামের এক দরিদ্র মাছ বিক্রেতা । উক্ত ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় এক চোখ হারিয়ে ভুক্তভোগী বাদী হয়ে মঙ্গলবার (১৪ই অক্টোবর) দন্ড বিধির ৩৩৮ ধারায় আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ২য় আদালতে দায়েরকৃত সি.আর.মামলা নং -৭৮৬/২৫।

মামলাসূত্রে জানা যায়, কালামিয়া বাজারস্থ চেয়ারম্যান ঘাটার বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ১০ই সেপ্টেম্বর পূর্ব বাকলিয়া সিটি করপোরেশন স্কুল সংলগ্ন ডাক্তার আমাজাদ হোসাইন রানার চেম্বারে চিকিৎসা নিতে গেলে তাকে মোট ৬ প্রকারের ঔষধ প্রদান করা হয়। ঔষধ সেবনের ১২ ঘন্টার মধ্যে বাদীর উভয় চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করলে ১৩ই সেপ্টেম্বর বাদী পুনরায় আসামি ডাক্তার রানাকে বিষয়টি অবগত করলে তিনি আরো কয়েকটি নতুন ঔষধসহ পূর্বের ঔষধগুলো চালিয়ে যেতে বলেন। পরবর্তীতে বাম চোখের অবস্থা আরো খারাপ হলে বাদী চট্টগ্রাম মেডিকেলের ডাক্তার তাহেরের নিকট গেলে তিনি দ্রুত চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি ১৫ই সেপ্টেম্বর পাহাড়তলী চক্ষু হাসপাতালে চোখ পরীক্ষা করিয়ে জানতে পারেন আসামী ডাক্তার রানার নির্ধারিত ডেল্টাসন নামক ঔষধ সেবনের কারণে বাম চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। ডাক্তারের পরামর্শে তিনি ২১শে সেপ্টেম্বর অপারেশনের মাধ্যমে বাম চোখ তুলে ফেলেন।

বাদী মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন বলেন, আমি খুবই দরিদ্র একজন লোক। ভ্যানে করে মাছ বিক্রি করে সংসার চালাই। কিন্তু এই ডাক্তার আমার যেই ক্ষতি করে দিলো সেটার কষ্ট আজীবন সহ্য করতে হবে। চোখ হারিয়ে ফেলেছি চোখ তো আর ফিরে পাবো না। কিন্তু আমি যদি ন্যায় বিচার পাই তাহলে আমার মতো আর কোন লোককে ভুল চিকিৎসার সাহস শুধু এই ডাক্তার না, কোন ডাক্তারই পাবে না। আদালতের কাছে আমি ন্যায় বিচার চাই।

বাদীর মেয়ে বলেন, বাবার জ্বর হওয়ার কারণে বাবাকে ঐ ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে তিনি কোন প্রকার ল্যাব টেস্ট না করিয়ে চিকনগুনিয়া হয়েছে উল্লেখ করে ব্যবস্থাপত্রের ঔষধগুলো সেবন করতে বলেন। এইসব ঔষধ সেবন করে বাবা একটা চোখ হারিয়ে ফেললো। পরে এলাকার লোকজনের মাধ্যমে জানতে পারলাম এই ডাক্তার ভুল চিকিৎসা করে নারী-শিশুসহ অনেক লোকের অপূরণীয় ক্ষতি করেছেন। তাই এই ডাক্তারের বিচার চাইতে আমরা আদালতে এসেছি।

বাদীর আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মদ রফিকুল হক বলেন, ডাক্তারের অবহেলার অভিযোগে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত করে ৩০ দিনের প্রতিবেদন প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আসামির ২ বছরের কারাদণ্ড, সাথে অর্থদন্ডও হতে পারে।

এই ব্যাপারে মুঠোফোনে জানতে চাইলে ডাক্তার রানা বলেন, এটা ভুল তথ্য। সংবাদ প্রকাশ না করে চেম্বারে গিয়ে দেখা করার অনুরোধ জানান তিনি।

সিভিল সার্জন ডাক্তার জাহাঙ্গীর আলমের মতামত মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি কোন ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হননি।

উল্লেখ্য, ডাক্তার মো: আমজাদ হোসাইন রানার প্রেসক্রিপশনে ডিগ্রি হিসেবে উল্লেখ রয়েছে এমবিবিএস, পিজিপিএন, পিজিটি মেডিসিন, সিসিডি বারডেম। সেখানে নিজেকে দাবী করেছেন শিশুরোগ, মেডিসিন, ডায়াবেটিস, চর্ম ও বাথ ব্যথা রোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে। ডিগ্রির সাথে এসব রোগের অভিজ্ঞতা থাকা কতটা যৌক্তিক সেটা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে সচেতন মহলের।

একটি বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায়, ১৮টি অখ্যাত ঔষধ কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ রয়েছেন ডাক্তার মো: আমজাদ হোসাইন রানা। রোগীকে এসব কোম্পানির ঔষধ নির্ধারণ করলে প্রতি কোম্পানি মাসে ৭ হাজার টাকা কমিশনসহ বিভিন্ন উপহার প্রদান করেন। তাই রোগীকে এসব অখ্যাত কোম্পানির নিন্মমানের ঔষধ নির্ধারণ করেন।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print