Search

মঙ্গলবার, ৯ই সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মঙ্গলবার, ৯ই সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ মঙ্গলবার, ৯ই সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৫শে ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৬ই রবিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি

চট্টগ্রামের পাঁচলাইশে পাসপোর্ট দালাল সর্দার জুয়েল এখন আরো বেপরোয়া, লালন করেন গুন্ডাবাহিনী

দালাল জুয়েল

এম. জিয়াউল হক : চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস কেন্দ্রীক প্রায় ২০০ দালালের সর্দার জুয়েল এখন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। পাসপোর্টের বিষয়ে এমন কোন অনিয়ম নেই যা তিনি করেন না। পাসপোর্ট অফিস ও প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ম্যানেজ করে তিনি এসব অপরাধ মূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। তার এসব অনৈতিক কর্মকান্ড নির্ভয়ে সম্পাদন করতে লালন করেন গুন্ডাবাহিনী। যারা অতীতে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত হয়ে পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী হিসেবেও পরিচিত। এসব সন্ত্রাসী বাহিনীর নেতৃত্ব দেয় ইউসুফ সিকদার প্রকাশ টাউট ইউসুফ।

জানা যায়, জাতীসংঘ পার্ক জিমনেসিয়াম এর বিপরীতে বরইতলার একটি পরিত্যক্ত ভবনের নীচ তলায় সম্পূর্ণ অবৈধভাবে অফিস খুলে এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন একরামুল হক প্রকাশ জুয়েল। জুয়েলের গ্রামের বাড়ী ফেনী। ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য মাত্র ১৬ বছর বয়সে চট্টগ্রাম শহরে আসেন হতদরিদ্র পরিবারের এই সন্তান। চট্টগ্রামে এসে কয়েক বছর বিভিন্ন অফিসে পিওন হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু পারিবারিক দারিদ্র্যতা জয়ের নেশায় সে মরিয়া হয়ে উঠে। ২০ বছর বয়সে পাসপোর্ট অফিসের দালাল হিসেবে তার পথচলা শুরু হয়। এই জগতে এসে টাকার বস্তা দেখতে তার বেশীদিন সময় লাগেনি। এই অবৈধ টাকায় তিনি চট্টগ্রাম শহরে বেশ কয়েকটি প্লট- ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন।
রোহিঙ্গা থেকে শুরু করে, দীর্ঘ সময়ের বয়স সংশোধন, নাম ঠিকানার অনেক বড় বড় গরমিলসহ এমন কোন পাসপোর্ট নেই যা জুয়েলের হাতে কন্টাক্ট হয়নি। পাসপোর্ট করতে পারুক বা না পারুক ২০ হাজার থেকে শুরু করে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত কন্টাক্ট করে ফাইল নেয় জুয়েল । হঠাৎ কোন কারণে পাসপোর্ট প্রণয়ন করতে না পারলে সেবাপ্রার্থীকে তার গুন্ডাবাহিনী দিয়ে মারধর করে তাড়িয়ে দেন এবং পরবর্তীতে টাকা দাবী করলে মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানি করার হুমকি দেয়। শুধু পাঁচলাইশ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস নয়, মনসুরাবাদ চট্টগ্রাম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসেও রয়েছে তার দৌরাত্ম্য। তার নিয়ন্ত্রিত ১০-১২ জন দালাল মনসুরাবাদ অফিসে যাতায়াত করলেও পাঁচলাইশ অফিসে তার বিচরণ সার্বক্ষনিক। যেখানে সেবাপ্রার্থী ছাড়া অন্য কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়না সেখানে দালাল জুয়েল অবাধে ঘুরাঘুরি করতে পারে। মাঝে মাঝে প্রবেশ গেট সংলগ্ন পুলিশের নিরাপত্তা রুমে বসেও জুয়েল সেবাপ্রার্থীর কাছ থেকে ফাইল কন্টাক্ট নেয় এবং বিভিন্ন পরামর্শ করে। অফিসে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদেরকে স্যার এবং পুলিশ, আনসার ও কর্মচারীদেরকে দোস্ত কিংবা ওস্তাদ সম্বোধন করে কথা বলে দালাল জুয়েল। প্রশাসন এবং সংবাদকর্মীদের নামে টাকার কথা বলে জুয়েল প্রায় ২০০ দালাল থেকে প্রতি সপ্তাহে ২০০ টাকা করে সংগ্রহ করেন। উল্লেখ্য যে, এই দালাল জুয়েল প্রশাসনের যাতায়াত নজরদারীর জন্য বেশ কিছুদিন পূর্বে তার অফিসের আশেপাশে গাছের উপর প্রায় ১০-১৫ টি সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছিলো। এই ব্যাপারে কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে গুরুত্বের সাথে সংবাদ প্রকাশ করা হলে প্রশাসন এই ক্যামেরাগুলো খুলে নেয়।

পাসপোর্টের কর্মচারীরা দালালদের সাংকেতিক চিহ্ন ছাড়া নানা অজুহাত দেখিয়ে পাসপোর্টের আবেদন গ্রহণ করেন না বিধায় দালালরা সেবাগ্রহীতাদের কাছ থেকে সবকিছু ঠিক থাকলেও সরকারি ফি ছাড়া আরো ২৫০০-৩০০০ টাকা বাড়তি নেয়। সেবাগ্রহীতারা হয়রানি থেকে বাঁচতে দালালদের আশ্রয় নেন। এই বাড়তি টাকা থেকে ১৬৫০ টাকা করে অফিসের সিন্ডিকেটের নিকট দিতে হয় বলে দাবী দালালদের। একজন অফিস সহকারী দালালদের সাংকেতিক চিহ্ন (মার্কা) অনুযায়ী টাকা লেনদেন করেন। প্রতি বুধবার সপ্তাহের উপরি আয়ের হিসাব করা হয়।

জানতে চাইলে দালাল সর্দার জুয়েল বলেন আমার অফিস বলতে তেমন না, সবাই বসে আড্ডা দেওয়া। শুধু দালাল নয়, অনেক সাংবাদিকও এসে এখানে বসেন।
পাসপোর্ট প্রতি ৩০০-৪০০ টাকা থাকে। সবমিলিয়ে দৈনিক ১০০০-১৫০০ আয় হয়। গুন্ডাবাহিনী রয়েছে সেই তথ্যটা সঠিক নয়। সেবাগ্রহীতাদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। প্রশাসনের কোন তৎপরতা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন এই লাইনে আছি সবার সাথে একটা সুসম্পর্ক রয়েছে। তবুও মাঝে মধ্যে তো ঝামেলা একটু হবেই।

এই ব্যাপারে জানতে চাইলে পাঁচলাইশ থানার অফিসার ইনচার্জ বলেন, দালালদেরকে সবসময় নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলে। পুলিশ তো সারাদিন পাসপোর্ট অফিসের সামনে বসে থাকতে পারবে না। পুলিশ টহল দিলে তারা সরে যায় পুনরায় জুয়েলের অফিসের আশেপাশে অবস্থান করে।

★জুয়েলের অবৈধ সম্পদ এবং পাসপোর্ট অফিসের যেসব অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জুয়েলের হাতের মুঠোয় থাকে তাঁদের নিয়ে শীঘ্রই প্রকাশিত হবে আরেকটি বিশেষ প্রতিবেদন।

Facebook
Twitter
LinkedIn
Telegram
WhatsApp
Email
Print