
মো: জিয়াউল হক : অপরের জমি জবরদখল করার জন্য ভূমিদস্যুরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ভুয়া দলিল-খতিয়ান তৈরী করে থাকে। চট্টগ্রাম জেলার বাঁশখালী থানাধীন সরল এলাকার এমনই একজন ভূমিদস্যুর বিরুদ্ধে ভুয়া বিএস খতিয়ান সৃজনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই ভূমিদস্যু হলো দক্ষিণ সরল ২ নং ওয়ার্ডের মরহুম আলহাজ্ব মৌলানা সিকান্দার আহমদ শাহ (রাহ:) এর ছোট ভাই মরহুম আলহাজ্ব মৌলানা লোকমান আহমদের পুত্র মৌলানা মনির উল্লাহ। পিতা এবং নিজের খরিদা ৫৪ শতক জমির পরিবর্তে ১০৬ শতকের বিএস খতিয়ান সৃজনের অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মনির উল্লাহর পিতা মৌলানা লোকমান আহমদ বাঁশখালী সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসের মাধ্যমে ০৪/০৩/১৯৮২ ইং তারিখে ফরিদ উদ্দিনের নিকট থেকে ১৩৪৪ নং কবলামূলে সরল মৌজার ৬.৫ শতক, ১০/০৬/১৯৮২ ইং তারিখে আহমদ হোসেন মিয়াজীর নিকট থেকে ৩৮৭৭ নং কবলামূলে ৪০ শতক এবং ০৪/০৫/১৯৯৪ ইং তারিখে মনির উল্লাহ এবং তার ভাই আমান উল্লাহ মোস্তাফিজুর রহমানের নিকট থেকে ১৭৭৬ নং কবলামূলে ৮ শতক জমি খরিদ করেন। পিতা এবং দুই পুত্রের খরিদা সম্পত্তির মোট পরিমাণ হয় ৫৪.৫ শতক। পিতার মৃত্যুর পরে সম্পূর্ণ জমির নামজারী খতিয়ান সৃজনের জন্য সবার পক্ষ থেকে মনির উল্লাহকে দায়িত্ব দেয়া হয়। মনির উল্লাহ ২০০৭ সালে ৩টি কবলার ৫৪.৫ শতক জমির নামজারি খতিয়ান সৃজনের আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে ২৫৫০/০৭ নং মামলামূলে সম্পূর্ণ জমি নিয়ে মো: এনামুল হক সহকারী কমিশনারের (ভূমি) স্বাক্ষরিত ১৩৩৪ নং বিএস খতিয়ান সৃজিত হয়।
পরবর্তীতে অর্থাৎ ২০১২ সালে প্রতারণার উদ্দেশ্যে পুনরায় মনির উল্লাহ ১৩৪৪ নং কবলার ৬.৫ শতক এবং ১৭৭৬ নং কবলার ৪.৮৩ শতক জমির নামজারি খতিয়ানের আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালে ১১.৩৩ শতক জমি নিয়ে ২৫৩৪/১২ নং মামলামূলে সাব্বির ইকবাল সহকারী কমিশনারের (ভূমি) স্বাক্ষরিত ১৬০৯ নং খতিয়ান সৃজিত হয়। এরপরে ২০১৩ সালে মনির উল্লাহ পুনরায় একই উদ্দেশ্যে ৩৮৭৭ নং কবলার ৪০ শতক জমির নামজারি খতিয়ানের আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে ৪০ শতক জমি নিয়ে ৩৬৮৪/১৩ নং মামলামূলে আরিফ আহমদ খান সহকারী কমিশনারের (ভূমি) স্বাক্ষরিত ১৭০৪ নং খতিয়ান সৃজিত হয়।
মনির উল্লাহর এরকম জঘন্য প্রতারণার বিষয়টি জানতে পেরে তারই আপন ভাই মৌলানা আব্দুল হাকিম অবৈধভাবে সৃজিত খতিয়ানসমূহ বাতিলের জন্য ২০১৮ সালে সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নিকট একটি আপত্তি প্রদান করেন, যার নং ১৬৫। উক্ত আপত্তি ২০১৯ সালে ১২১/২০১৯ নং মিছ মামলায় রূপান্তরিত হয়ে বর্তমানেও চলমান আছে।
প্রতারণার প্রসঙ্গে মরহুম আহমদ হোসেন মিয়াজীর একজন ওয়ারিশ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের পূর্ব পুরুষ মরহুম আহমদ হোসেন মিয়াজীর নিকট থেকে ১ কানি বা ৪০ শতক জমি খরিদ করলেও আরো বেশি জমি জবরদখল করতে মনির উল্লাহ গং ২ কানি বা ৮০ শতক অর্থাৎ দ্বিগুণ জমির বিএস খতিয়ান সৃজন করেছেন। তিনি নিজেকে মৌলানা বলে দাবী করলেও অনেক বড় প্রতারক এবং পরধনলোভী। ভূমি অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তাকে ঘুষ দিয়ে তিনি এসব জাল-জালিয়াতি করে থাকেন। তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে হয়রানি করে, এই কারণে কেউ তার অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সাহস পায় না। সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নিকট অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, দ্রুত যাচাই-বাছাই করে অবৈধভাবে সৃজিত খতিয়ানগুলো বাতিল করা অতীব জরুরি। অন্যথায় মনির উল্লাহ জাল দলিল তৈরি করে আমাদের অনেক জমি দখলের চেষ্টা করবে।
প্রতারণার ব্যাপারে জানতে মনির উল্লাহর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায় নি।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে বর্তমান সহকারী কমিশনার (ভূমি) বলেন, এরকম অনেক মিছ মামলা রয়েছে যেগুলোর বাদী- বিবাদী কেউ যোগাযোগ করেন না। বাদীপক্ষ যোগাযোগ না করার কারণে এই মামলাগুলো পড়ে থাকে। বাদীপক্ষ যোগাযোগ করলে দ্রুত নিষ্পত্তি করবেন বলেও জানান তিনি।