
প্রভাতী ডেস্ক: বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ বানচাল করতে সরকার ‘পুলিশ লাগিয়ে দিচ্ছে’ বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, “আপনারা সমাবেশকে বানচাল করার জন্য পুলিশকে লাগিয়ে দিয়েছেন বিভিন্ন জায়গায় মারামারি করার জন্য। সিরাজগঞ্জে গুলি করেছে, আমাদের ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সাহেবের স্ত্রীকে পর্যন্ত গুলি করেছে, সিলেটে গুলি করেছে, গোলমাল করেছে, হবিগঞ্জে গুলি করেছে। কেন? সমাবেশকে আপনারা এতো ভয় পান কেন? আজকে জনগণ জেগে উঠছে, জনগণ জেগে আছে।”
শুক্রবার(১৮ নভেম্বর) নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কৃষক সমাবেশে তিনি বিভিন্ন কর্মসূচিতে ‘সরকারি প্রতিবন্ধকতা’ সৃষ্টির এ অভিযোগ করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা খুব স্পষ্ট করে বলেছি- এখনই পদত্যাগ করুন, সংসদ বিলুপ্ত করুন এবং নির্দলীয় কেয়ারটেকার সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন। ক্ষমতা দিয়ে আপনি অবশ্যই একটা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে তার মাধ্যমে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন, জনগণের পার্লামেন্টের ব্যবস্থা করুন।
“অন্যথায় জনগণের উত্তাল তরঙ্গে আপনাদেরকে বিদায় নিতে হবে। তাই আবারও বলছি, এখনও সময় আছে সেইভ এক্সিট নিন, মানে সরে যান।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার এবং কৃষকদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের দাবিতে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের উদ্যোগে এ সমাবেশ হয়। এতে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে বিএনপির অঙ্গ সংগঠনটির নেতাকর্মীরা যোগ দেন। সমাবেশে শুরুতে আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের দুরাবস্থার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, “এদেশের কৃষকরা যারা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করে ফসল ফলায়, যাদের গায়ে পারফিউমের গন্ধ থাকে না, সেন্টের গন্ধ থাকে না; তাদের গায়ে থাকে মাটির গন্ধ, তাদের গায়ে থাকে সেই বৃষ্টিতে ভেজা কাদার গন্ধ। তারা দিনরাত্রি পরিশ্রম করে ফসল ফলিয়ে এদেশের মানুষকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
“আপনাদের (কৃষকদের) নির্বাচনের সময় সার দেবে বলেছিল; বিনামূল্যের সার দিয়েছে? দেয় নাই। এখন ইউরিয়া সার, পটাশ সারের দাম কত? অনেক বেড়ে গেছে। এখন ধান বিক্রি করে ধানের দাম পাওয়া যায় না, ন্যায্য মূল্য পায় না। এখন অনেক প্রান্তিক কৃষক ক্ষেত ছেড়ে, মাঠ ছেড়ে ঠেলা গাড়ি-ভ্যান চালায়। এই সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কৃষকের কোমড়, কৃষকের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে।”
এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বর্তমান সরকারকে ‘সরানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই’ মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা কি ২০১৮ সালের আগের রাত্রে নির্বাচনে যাব? শেয়ালের কাছে মুরগি দেব? না। তাহলে শেখ হাসিনাকে সরাতে হবে।
“শেখ হাসিনাকে সরাতে হলে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই নির্বাচনে আগে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে।”
কৃষক দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, “আমি কৃষক ভাইদের বলব, আজকে এখান থেকে গিয়ে গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়ুন, সমস্ত কৃষকদের জাগিয়ে তুলুন। এই দেশকে যদি রক্ষা করতে হয়, এই জাতিকে যদি রক্ষা করতে হয়, আপনার অধিকারকে যদি রক্ষা করতে হয়; তাহলে আজকে সমস্ত দেশবাসীকে নিয়ে, কৃষকদের নিয়ে আপনাদেরকে জেগে উঠতে হবে, পরাজিত করতে হবে এই ভয়াবহ দানবীয় শক্তিকে।”
কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদেদর মধ্যে বক্তৃতা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, আমিনুল হক, তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন।