
প্রভাতী ডেস্ক : হাইকোর্টের আদেশের পর চট্টগ্রাম ওয়াসা পানির নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট জমা দিয়েছে এ সংক্রান্ত সরকারের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি। রিপোর্টে লাভ লেইনে অবস্থিত চট্টগ্রাম ওয়াসার গভীর নলকূপের পানিতে ক্ষতিকারক ‘কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া’ পাওয়ার কথা জানা গেছে। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে রিপোর্টটি চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে হাইকোর্ট ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কলিফর্ম মিশ্রিত পানি পানে ডায়রিয়া, আমাশয়, রক্ত আমাশয়, কলেরা, টাইফয়েড, জন্ডিসের মতো জটিল রোগ হয়ে থাকে। এই ধরনের ব্যাকটেরিয়াযুক্ত পানি পান করতে হলে অন্তত ১৫ মিনিট সিদ্ধ করে নিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশের আলোকে চট্টগ্রাম ওয়াসার ১২টি পয়েন্ট থেকে দুই দফায় ২৪টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর এসব নমুনা তিনটি সরকারি ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় একটি গভীর নলকূপের পানিতে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। তবে তা একটি ল্যাবের পরীক্ষায় পাওয়া গেছে। একই নমুনার পানি অন্য দুইটি ল্যাবের পরীক্ষায় ভাল ছিল। অবশ্য পরিশোধনের মাধ্যমে ওয়াসা যেসব সারফেস ওয়াটার গ্রাহকদের সরবরাহ করছে সেগুলোর রেজাল্ট ওভারঅল ভাল পাওয়া গেছে’।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কমিটির সদস্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের প্রফেসর ড. মো. জোবাইদুল আলম বলেন, ‘চট্টগ্রাম ওয়াসা পানির নমুনা সংগ্রহের পর ল্যাবে পরীক্ষা করেছি। পরীক্ষার রিপোর্ট চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে জমা দিয়েছি’। তবে তিনি রিপোর্টের কোন তথ্য জানাতে অস্বীকৃতি প্রকাশ করেন।
হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি চট্টগ্রাম ওয়াসা পানির নমুনা পরীক্ষা করেন। এর আগে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের একটি চিঠির প্রেক্ষিতে গত ৯ জুন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিনের সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। হাইকোর্টের নির্দেশনায় ওই সভায় চার সদস্যের ‘চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি নমুনা পরীক্ষা সংক্রান্ত কমিটি’ গঠন করা হয়। বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে ওই কমিটির অন্য ৩ সদস্য হলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের প্রফেসর ড. মো. জোবাইদুল আলম, বাংলাদেশ বৈজ্ঞানিক ও শিল্প গবেষণা পরিষদ চট্টগ্রামের ড. দীপংকর চক্রবর্তী এবং পরিবেশ অধিদপ্তর (গবেষণাগার) চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মো. কামরুল হাসান। কমিটির সভায় চট্টগ্রাম ওয়াসার ২৪টি স্পট থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। স্পটগুলো হচ্ছে-চট্টগ্রাম ওয়াসার শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-১ ও ২ (রাঙ্গুনিয়া), শেখ রাসেল পানি শোধনাগার (মদুনাঘাট), মোহরা পানি শোধনাগার, ওয়াসার কালুরঘাট আয়রন রিমুভ্যাল বুস্টিং স্টেশন, ওয়াসার ৫টি পানির রিজার্ভার যথাক্রমে নাসিরাবাদ ১ ও ২, লাভলেইন গভীর নলকূপ, বাটালিহিল রিজার্ভার, হালিশহর এলিভেটেড ট্যাংক, ১০টি পানি বিতরণ পয়েন্ট যথাক্রমে, পতেঙ্গা বুস্টার স্টেশন, ডিটি রোড বুস্টার স্টেশন, হালিশহর বি ব্লক, হালিশহর ঈদগাঁ কাঁচা বাজার, আগ্রাবাদ কমার্শিয়াল এরিয়া, জামালখান, চান্দগাঁও আবাসিক, চকবাজার পারসিভিল হিল, মুরাদপুর মোহাম্মদপুর আবাসিক এলাকা, বাকলিয়া কেবি আমান আলী রোড। গ্রাহক পর্যায়ে ৪টি পয়েন্ট যথাক্রমে, বড়পুল হালিশহর জি ব্লক, মেহেদীবাগ আমীরবাগ আবাসিক এলাকা, প্যারেড কর্নার সিরাজউদ্দৌল্লাহ রোড ও খাজা রোড বাদামতল এলাকা। পরে নমুনাগুলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়।
প্রসঙ্গত, ঢাকা ওয়াসার পানির গুণগত মান পরীক্ষার জন্য জনৈক ব্যক্তি হাটকোর্টে জনস্বার্থে রিট করলে আদালত ঢাকা ও চট্টগ্রাম ওয়াসার পানি পরীক্ষা করে রিপোর্ট প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা প্রদান করেন। তারই আলোকে চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞ কমিটি। এ কমিটি পানির পিএইচ, টিডিএস, ইসি, আয়রন, আর্সেনিক, ক্লোরাইড, টিভিসি ও কলিফর্ম পরীক্ষা করে।